নরসিংদী: কর্ম ও উদ্দীপনা নিয়ে শুধু পুরুষরা এগিয়ে যাচ্ছে না, নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে। এর দৃষ্টান্ত নরসিংদী শহরের চিনিশপুর গ্রামের ছফুরা বেগম। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা এবং মানবাধিকার কর্মী। তার জীবনের দিনগুলো ব্যয় হচ্ছে সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উন্নয়নে। ছফুরা বেগম অবহেলিত নারীদের ঘর থেকে কর্মক্ষেত্রে আসার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, যাতে করে তারা আত্মকর্মে নিযুক্ত হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
১৯৯২ সালে ২০ জন দুস্থ মহিলা নিয়ে সফুরা তার গ্রামের বসত বাড়িতে ‘চিনিশপুর দীপশিকা মহিলা সমিতি’ নামে একটি সমিতি গঠন করেন। স্থানীয় মহিলা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সমাজের অবহেলিত মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নকশী কাঁথা’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সাহায্য নিয়ে ২ বছরের মধ্যে ‘দীপশিকা মহিলা সমিতি’ স্থানীয় এনজিও হিসেবে নিবন্ধ ফলে মহিলা উন্নয়নে তিনি আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করার সুযোগ পান। ছফুরা ২০০৩ সালে অশোকা ফেলোশিপ ইউএসএ লাভ করেন।
৪৫ বছর বয়স্ক ছফুরা জানান যে, তিনি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতেন তখন তার বাবা তাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বিবাহের ৫ মাস না যেতে কালো মেয়ে বলে এবং যৌতুকের জন্য স্বামীর সংসার ছাড়তে হয়। বাবা ছিলেন গরীব মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেকে কঠিন দিন শুরু হয় তার। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে চাকরি নিতে হয় স্থানীয় একটি পাট কলে। সেখানে চাকরিরত নারী শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায় করতে গিয়ে তাকে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু দমে যাননি তখনকার ১৬ বছর বয়সের এই নারী। প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পাট কলে নারী শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী এবং অধিকার। ২ বছর পর পাটকল ছেড়ে তিনি একটি এনজিওতে কিছুদিনের জন্য কাজ নেন এবং পরবর্তীতে ‘চিনিশপুর দীপশিকা মহিলা সমিতি’ নামে একটি এনজিও’র নিবন্ধন করেন।
এই নারী উদ্যোক্তা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন- নকশী কাঁথা সেলাই, পোশাক তৈরী, হাঁস মুরগী ও গবাদি পশু পালন, মৎস চাষ, বাগান করা এবং অন্যান্য আয়বর্ধক কাজে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় ২০ হাজার নারীকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।
ছফুরা বিভিন্ন কৃতিত্বের জন্য বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০০৩ জাতীয় শিক্ষা পুরস্কার ও অশোকা ফেলোশিপ ইউএসএ, ২০০৫ জেলা সম্মাননা পুরস্কার, ২০১০ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর ওয়ার্ল্ড ফিস পুরস্কার এবং ২০১২ জেলা পর্যায়ে মৎস্য পুরস্কার পেয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা ছফুরা ২০১৩ সালে শিং মাছ উৎপাদন এবং গবেষণা কাজে সফল অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে (ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ঢাকা) রৌপ্য পদক গ্রহণ করে। সম্প্রতি ছফুরা বেগম জেলার অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক জেলার জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমীর হামজার বলেন, বাংলাদেশে ছফুরার মতো এ ধরনের সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ থাকলে দেশে উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ হবে আত্মনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দেশ।
No comments:
Post a Comment