Wednesday, March 5, 2014

ঠাকুরগাঁওয়ের কমলা বাগানগুলোয় এবারও প্রচুর ফল এসেছে

ঠাকুরগাঁও : রসালো পাকা কমলা দেখলে কার না জিভে জল আসে। আবার সে কমলা যদি হয় নিজ দেশে উৎপাদিত তাহলে তো রসনাকে সংযত করাই কঠিন। কম করে হলেও দেশের মানুষ এবার ঠাকুরগাঁওয়ের উৎপাদিত কমলা দিয়ে রসনা তৃপ্ত করতে পারছেন। কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০০৬ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। এর বাস্তবায়নস্বরূপ বেশ কিছু বাগানে এবার প্রচুর ফল আসে। এর চাহিদা অনেক। এখানকার কমলা বেশ রসালো ও মিষ্টি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুবাড়ি গ্রামের কমলা চাষী আব্দুল মান্নান চৌধুরী জানান, তার বাগানের প্রতিটি গাছে এবারও প্রচুর ফল এসেছিল। শীতকালে কমলাগুলো পেকে যাওয়ায় এবং গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করায় মনে হয় পুরো বাগান আবীর দিয়ে যেন রাঙিয়ে দেয়া হয়েছে । 

মান্নান চৌধুরী আরও জানান, তিনি ২০০৯ সালের জুন মাসে কমলা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১৫৫টি খাসিয়া ম্যান্ডারিন জাতের চারা এনে ৫০ শতক জমিতে লাগান। উপযুক্ত পরিচর্যা করায় গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠে । গত বছর থেকে প্রতিটি গাছ প্রচুর ফল দেওয়া শুরু করেছে । মান্নান চৌধুরীর বাগানের কমলার সাইজ বেশ বড়। মিষ্টি হালকা হলেও স্বাদ গন্ধ বেশ ভাল। 

কমলা উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়েছে ২০১০ সালের ৩০ জুন। এই প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁও জেলার রানীসংকৈল ও সদর উপজেলায় গত ৫ বছরে ২২৬টি বাগান গড়ে উঠেছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় ৭৫ হেক্টরে এবং পঞ্চগড় জেলায় ১১০ হেক্টরে কমলা চাষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এখন কমলা চাষীর সংখ্যা ১,১৫০ জন। মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৮৭ হাজার। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এটি দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । 

ভিটামিনযুক্ত এই রসালো ফলের চাষ প্রথমে সখের বশে শুরু করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের কানাইলাল। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক এখন কমলাকে বাণিজ্যিক ও অর্থকরী ফসল হিসাবে দেখছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুবাড়ি গ্রামের আব্দুল মান্নান চৌধুরী, আকচা গ্রামের গোলাম সারওয়ার, ইয়াকুবপুর গ্রামের কানাইলাল, মুন্সিরহাট গ্রামের ফরহাদ হোসেন, রানীসংকৈল উপজেলার কাদিহাট গ্রামের রুস্তম আলী, বনগাঁর সিরাজউদ্দিন, জগদল গ্রামের আব্দুর রহিম এবং আরো অনেকে এই প্রকল্পের আওতায় কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন । 

ঠাকুরগাঁও জেলায় শখের বশবর্তী হয়ে সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের কানাইলাল ২০০১ সালে ১০ শতক জমিতে ৪৩টি নাগপুরী, খাসিয়া ও ম্যান্ডারিন জাতের কমলার চারা লাগান । চার বছর পর তার বাগানে ফল আসে । 
২০০৬ সালে সরকার জেলার রানীসংকৈল ও সদর উপজেলায় কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। গত ৭ বছরে এই দুই উপজেলায় ছোট বড় ২২৬টি কমলার বাগান হয়েছে। এসব বাগানে গড়ে ১৭০টি করে প্রায় ৩৮ হাজার গাছ রয়েছে। এ ছাড়া ৪,১৪০টি বসত বাড়ীতে গড়ে ১২টি করে প্রায় ৪৯ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। কমলা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার কৃষককে। খাসিয়া ও ম্যান্ডারিন জাতের এসব কমলার আকার, বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ খুবই উন্নত । 

সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ফেরসাডাঙ্গী। শহর থেকে ১৪ কি.মি. দূরে। এই গ্রামের ২১০টি পরিবার ১২ থেকে ১৫টি করে প্রায় ৩ হাজার কমলার চারা লাগিয়েছেন। এই গ্রামের আব্দুর রহমান, সফিরউদ্দিন, খলিলুর রহমান, কেতাবুর রহমান, মঞ্জুয়ারা বেগম, জিল্লুর রহমান জানান, তাদের জমি অনুর্বর, চাষ আবাদ করে বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না । তাই তারা ওই সব জমিতে কমলার চারা লাগিয়েছেন বাড়তি কিছু লাভের আশায় । 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলায়েত হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার মাটি, তাপমাত্রা ও জলবায়ু কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এসব কারণে এখানে সরকার কমলা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে । এই দুই জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার চাষ করা যেতে পারে । 

No comments:

Post a Comment