Monday, April 21, 2014

স্ট্রবেরি চাষ করে মণিরামপুরের শিক্ষিত বেকার ফারুক হোসেন স্বাবলম্বী

যশোর: স্ট্রবেরী সারা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ফল। কিছুটা লিচুর ন্যায়, দৃষ্টি নন্দন ও সুস্বাদু। এ ফলটি জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটি বীরুৎ জাতীয় বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও এ দেশে শীতকালে স্ট্রবেরী চাষ সম্ভব। সারা পৃথিবীতে নানা জাতের স্ট্রবেরী চাষ হলেও- দীর্ঘ দিবাজাত, স্বল্প দিবা জাত ও দিন নিরপেক্ষ জাতের চাষ বেশী হয়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন সোমা ক্লোনাল ভেরিয়েশন প্রযুক্তির সাহায্যে এ দেশে চাষ উপযোগী করে- রাবি-১, রাবি-২, রাবি-৩ নামে তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। খোলামেলা জায়গা, পানি নিষ্কাশন, সেচ, তাপমাত্রা, উজ্জ্বল সূর্যলোক অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশের নানা জায়গায় গত কয়েক বছর যাবৎ এর চাষ শুরু হয়েছে এবং স্বাবলম্বী হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা। 

টেলিভিশনে স্ট্রবেরী চাষের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদনসহ অনুষ্ঠান দেখে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের পুত্র এমএ পাস শিক্ষিত বেকার যুবক ফারুক হোসেন শিমুলের আগ্রহ জন্মে স্ট্রবেরী চাষের। টেলিভিশন থেকে নেয়া তথ্য নিয়ে শিমুল ছুটে যান মাগুরার স্ট্রবেরী চাষি তুহিনের কাছে। তুহিনের মাধ্যমে শিমুল চলে যান এ দেশের স্ট্রবেরী চাষের উদ্ভাবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধাপক ড. মনজুর হোসেনের কাছে। আত্মবিশ্বাসের প্রতীক শিমুল ড. মনজুর হোসেনের মাধমে স্ট্রবেরী চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরিদর্শন করেন দেশের বিভিন্ন স্থানের নানা ক্ষেত। স্ট্রবেরী চাষের ওপর সম্যক ধারণা নিয়ে বাড়ি ফেরেন শিমুল।

সংকটময় ও তীব্র প্রতিযোগিতার এ সময়ে চাকরির পেছনে না দৌঁড়িয়ে তিনি স্থির করেন নিজেকে আমি স্ট্রবেরী চাষ করবো এবং নিজেকে অন্যান্যের ন্যায় আত্মনির্ভরশীল করে তুলব। সে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে স্থানীয় কামালপুর মাঠে ২০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে উদ্ভাবক ও মাগুরার চাষী তুহিনের পরামর্শ মোতাবেক নিজস্ব প্রজ্ঞা খাটিয়ে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ৫ হাজার চারা রোপণ করেন গত বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে।

নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত ৫ মাস এ চাষের জন্য উপযোগী সময়। জমি লিজ, উপযুক্ত মাটি, সেচ, সার, উত্তম পরিচর্যাসহ ফল আসা পর্যন্ত গতবছর শিমুলের খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ৪৫-৬০টি স্ট্রবেরীতে ১ কেজি হয়। প্রতি কেজি স্ট্রবেরী (ফল) পাইকারি স্থানীয় যশোরের হাটবাজারে ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রতিটি স্ট্রব্রেরী গাছ থেকে ৩শ’ গ্রাম ফলা পাওয়া যেতে পারে। তবে তার ক্ষেতের গাছ থেকে আরও বেশি ফল পাওয়া গেছে বলে শিমুল জানান। এ বছরও স্ট্রবেরী চাষের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে শিমুল। 
মাত্র ৫/৬ মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করা একজন শিক্ষিত বেকার যুবকের স্বপ্নের ব্যাপার হলেও মণিরামপুরের মোহনপুর গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক শিমুল সে স্বপ্নকে সম্ভব এবং বাস্তবে পরিণত করে চলেছেন। সে এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তুলেছেন অগ্রণী বিশেষায়িত কৃষি খামার। 

No comments:

Post a Comment