Thursday, May 22, 2014

বরিশালের ব্রান্ড-আইটেম হিসেবে পরিণত হয়েছে গুঠিয়ার সন্দেশ

বরিশাল: উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ছানার তৈরী গুঠিয়ার সন্দেশ বর্তমানে দেশব্যাপী বরিশালের ব্রান্ড-আইটেম হিসেবে পরিণত হয়েছে। 
জানা গেছে, শুধু বরিশাল মহানগরী নয় গুঠিয়ার সন্দেশ’র খ্যাতি দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বরিশাল নগরী থেকে গুঠিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। 

এই গুঠিয়া ইউনিয়নটি আজ সুখ্যাতি লাভ করেছে তার তেরী বিখ্যাত সন্দেশ’র জন্য। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আসা ভোজন বিলাসী মানুষ বরিশালে পা রাখলে গুঠিয়ার সন্দেশ-এর স্বাদ নিয়ে যাবেন এমটাই বলেন স্থানীয়রা।

গুঠিয়া সন্দেশের প্রধান বিক্রেতা বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী পরিমল ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি এসেছে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া অঞ্চল থেকে। আমার কাকা সতীশ ভদ্র আমাদের এ দোকানেই ছিলেন। এরপর বিএম কলেজের সামনে দোকান দেন। কাকার (সতীশ ভদ্র) মুখে শুনেছি, পাকিস্থান আমলে তিনি পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া এলাকায় এক কারিগরের কাছে তিনি এর রেসিপি শিখে নেন। পরে ১৯৬২ সালে তিনি দেশে এসে নতুন ধরণের এই সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। অচিরেই এই সন্দেশের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে গুঠিয়া ছাড়াও বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি শো’রুমে এই সন্দেশ পাওয়া যায়।

সন্দেশ তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিমল চন্দ্র ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি অত্যন্ত সাধারণ। পরিমাণ মত ‘আঁচ ও পাক’ই ভালো সন্দেশ তৈরীর প্রধান রেসিপি। ভাল সন্দেশ তৈরি করতে খাঁটি দুধের প্রয়োজন। সাধারণত ৬ থেকে ৭ কেজি খাঁটি দুধে ১ কেজি ছানা হয়। ছানার সাথে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে অল্প জাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট জ্বালে পাক দিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই গুঠিয়া সন্দেশের কাঁচামাল তৈরি হয়।

এরপর পরিমাণ মত কাঠের বাটার উপরে নিয়ে সন্দেশের আকার তৈরী করা হয়। সৌন্দর্যের  (ডেকরেশন) জন্য সন্দেশের উপর কিচমিচ দেয়া হয়।

তিনি জানান, গুঠিয়া সন্দেশ টাটকা থাকলে তা থেকে টাটকা গরুর দুধের সুঘ্রাণ আসবে। অত্যন্ত মুখরোচক এই সন্দেশে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কোন প্রকার উপকরণ থাকে না। গরুর দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ দিয়ে গুঠিয়ার সন্দেশ তৈরি করা হয় না।

বর্তমানে নগরীতে ও গুঠিয়া এলাকায় এ সন্দেশের বহু দোকান থাকলেও বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডারকে এর সুতিকাগার বলা যায়। ১৯৬২ সাল থেকে এই দোকানটি গুঠিয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে সন্দেশ বানিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত সন্দেশ বানিয়ে থাকেন তারা । প্রতিকেজি সন্দেশ বিক্রি হয় ৪’শ টাকা করে। ১ কেজিতে ২৫ পিস পর্যন্ত সন্দেশ ওঠে।

আদি গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্বাধিকারী শ্রীধাম ঘোষ জানান, ভোজন বিলাসীদের কাছে গুঠিয়ার সন্দেশ লোভনীয় একটি নাম। এ খাবার দেখলে জিভে জল আসে না এমন ভোজন বিলাসীদের সংখ্যা অতি নগন্য। বরিশালে ভোজন বিলাসী কেউ আসলে গুঠিয়ার সন্দেশের স্বাদ নিতে ভোলে না। মানুষ বরিশালে কাজে বা বেড়াতে এলে ফেরার সময় গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়ে যায়। আর ধীরে ধীরে এভাবেই গুঠিয়ার সন্দেশের এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। 

No comments:

Post a Comment