Thursday, June 26, 2014

তথ্য ও ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে

মাগুরা: বর্তমান সরকারের সময়ে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বল্প সময়ে হয়রানি মুক্তভাবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে যশোর জেলার পর দ্বিতীয় জেলা হিসেবে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে চালু হয়। এরপর দেশের অন্যান্য জেলাতে এ কার্যক্রম চালু হয়। এর সেবা পেয়ে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। দেখা যায়, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নাগারিক সেবা পেতে ২ তিন সপ্তাহের জায়গায় এখন মাত্র ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগছে। 

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দুর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত সেবা দানের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে (এ্যকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প) পরবর্তিতে সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর কাজ শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে জেলার ৩৬ ইউনিয়েনে চালু হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সেবা কেন্দ্রে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এসব প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা পরিচালকদের বেকারত্ব দূর হবার পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সেবা দানের মাধ্যমে তারা ভালো আয় করছে। পরবর্তীতে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে চালু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে দেশব্যাপী ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রর উদ্যোক্তা পরিচালকরা ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে ই-মেল প্রদান, অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধন, আউটসোর্সিং কাজ, ফটোকপি এবং লেমিনেটিং, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদানকরার পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সেবা ছাড়াও কম্পোজ, ছবি তোলা, প্রিন্ট ও স্ক্যানিং এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখানো ও প্রজেক্টর ভাড়া, এছাড়া জীবন বীমা কর্পোরেশন ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ ও মাকেন্টাইল ব্যাংকের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দ্রুত গ্রামীণ মানুষের অর্থ আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছেন। এর ফলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি হয়রানিমুক্ত ভাবে সেবা পাচ্ছেন তারা। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে শালিখার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ও শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের রুপালী খাতুন এ বছর শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পরিচালকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। জেলা প্রশাসন তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে স্কিনটাস ট্রাব দিয়েছেন। যা দিয়ে তারা ফোনে কথা বলাসহ ইন্টারনেট ব্যবহারে কাজে লাগাতে পারছেন। 

শালিখা উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা রামপুর গ্রামের তাপস কুমার অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন সংগ্রহ করেন। কাঠালবাড়িয়া গ্রামের শান্ত বিশ্বাস অন লাইনে পাসপোর্টের আবেদন ও বিউটি রানী পোদ্দার অনলাইনে ছেলের জন্ম নিবন্ধন করান। তারা জানান, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সহজভাবে স্বল্প সময়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই খুব দ্রুত তারা সেবা গ্রহণ করতে পেরেছেন। এটি চালু হওয়ায় তারা অনেক সহজে সেবা পেয়েছেন। তাদের মত গ্রামের অনেক মানুষ প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন। 

অন্যদিকে মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জনসাধারণ ই-সেবা কেন্দ্র থেকে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। জমির পর্চার নকল তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন করতে পারছেন। এ ছাড়া আবেদনকারী দাখিলকৃত আবেদনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানতে পারছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর জমির পর্চার নকলের জন্য মানুষকে এখন আর রেকর্ড রুমে যেতে হয় না। ই-সেবা কেন্দ্র থেকে এখন জমির পরচার নকলের আবেদন দাখিল ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা গ্রহণ করতে পারছেন।

জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জরুরিভিত্তিতে জমির এস, এ এবং আর, এস পর্চার নকলের জন্য মাত্র ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং জমির সি, এস পর্চার জন্য মাত্র ২৪ টাকা কোর্ট ফি দিতে হচ্ছে। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে ১৯ জুন-২০১৪ পর্যন্ত জমির পর্চার নকল নেয়ার জন্য ৯০ হাজার ৬’শ ৪৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৯ হাজার ২’শ ৪৭ টি আবদেন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। 

মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবা কেন্দ্রে আগত মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার ওমেদপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন- জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে অতি কম খরচে কম সময়ের মধ্যে জমির পর্চার নকল হাতে পেয়েছি। হয়রানি মুক্তভাবে নির্ধারিত সময় জমির পর্চার নকল পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। 

জেলা প্রশাসক মাসুদ আহমদ বলেন, জনগণের দোর গোড়াই সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ও জেলা প্রশসাকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে সেবা প্রদান করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। 

No comments:

Post a Comment