Sunday, February 20, 2022

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি জুতার রপ্তানি বেড়েছে ৭৩.২২ ভাগ

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি জুতার রপ্তানি বেড়েছে ৭৩.২২ ভাগ

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি জুতার রপ্তানি বেড়েছে ৭৩.২২ ভাগ

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি জুতার রপ্তানি বেড়েছে ৭৩.২২ শতাংশ। এতে রপ্তানিকারকদের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৪.৫৮ মিলিয়ন ডলারে।

গত বছরের মোট আয়ের মধ্যে ২৪৯ মিলিয়ন ডলার এসেছে চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে, আর বাকিটা এসেছে অচামড়াজাত জুতা থেকে।

ওটেক্সা’র (অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জুতা রপ্তানি করে ১৫৮.৫১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি ১০৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৬১.৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৪.৫৮ মিলিয়ন ডলারে ।

মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং একটি একক দেশের ওপর নির্ভরতা হ্রাস, এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। যুক্তিসঙ্গত দাম এবং সফলভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশের মান উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি রপ্তানিমুখী চামড়ার পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “মার্কিন সরকার তার একক দেশের আমদানি নির্ভরতা কমাচ্ছে। এছাড়া, বাণিজ্য দ্বন্দ্বের কারণে চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যগুলো ক্রমবর্ধমান শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

ইসলাম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য কেনার গন্তব্যের ওপর একটি ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপরন্তু, মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা শুল্কের পরিমাণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। ফলে তারা প্রচুর পরিমাণে অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত করেছে, যা আমাদের রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করেছে।

খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ধরে রাখতে হবে রপ্তানিকারকদের। একই সাথে রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেদারেক্স ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আমদানিকারকদেরকে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে প্ররোচিত করছে, যাতে পণ্যের আমদানি গন্তব্য কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কম হয়।”

বাংলাদেশের লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাজমুল বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে মার্কিন আমদানি নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক যুদ্ধ ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোকে পণ্য ক্রয়ের গন্তব্য স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করেছে।

এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আমরা মার্কিন বাজারের সিংহভাগ দখল করতে সক্ষম হবো, যদি আমরা পরিবেশ অনুকূলে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি এবং লিড টাইম কমাতে পারি।”

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, “দেশে বিদ্যমান কাঁচামাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি, আমরা সহজেই মার্কিন বাজারে নেতৃত্ব দিতে পারি।”

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেছেন, যদিও পরিবেশগত আর কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে বাধা সৃষ্টি করে৷ সরকারের উচিত পৃথক কোম্পানিগুলোকে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের অনুমতি দেয়া। যদিও এটি একক কোম্পানির পক্ষে কঠিন, তবে তাদের ব্যবসার স্বার্থে এটি করা উচিত।

বাংলাদেশের ফুটওয়্যার পণ্যের ব্র্যান্ডিং দেশের রপ্তানি আয়ের বড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমেরিকান ক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি পণ্য আর এসবের গুণমানের সাথে পরিচিত ছিল না, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করায় রপ্তানিকারকদের তাদের সাথে সংযুক্ত করেছে।”

তিনি বলেন, “তারা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশি চামড়ার পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্যের সোর্সিং শোয়ের আয়োজন করেছে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠীর সমালোচনার মুখে বায়ু ও পানি দূষণ রোধে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ঢাকার সাভার উপজেলায় ট্যানারি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

২০১৭ সালের এপ্রিলে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সরকার এবং প্রায় ২০০টি ট্যানারিকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করতে বাধ্য করে।

অনেক ট্যানার সাভারে স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানিতে উন্নতি হয়েছে।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বর্তমান অবস্থা

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২৯.৬৬ শতাংশ বেড়ে ৬৮২.৭৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ছিল ৫২৭ মিলিয়ন ডলার।

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ৩৭.৪১ শতাংশ বেড়ে ১৮৩ মিলিয়ন এবং চামড়ার জুতা ২৫.৭৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৪.৫২ মিলিয়ন ডলারে।

No comments:

Post a Comment