Wednesday, June 11, 2014

রাজশাহী অঞ্চলে বাঁশ শিল্প রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন

রাজশাহী: বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাঁশ শিল্পে মন্দাভাব বিরাজ করছে। তাই বাঁশ শিল্প রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

পরিবেশবিদ ও গবেষকগণ জানান, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজারে বাঁশজাত সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নির্ভর সামগ্রী উৎপাদন করা দরকার। আর এসব সামগ্রী তৈরিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও দূর করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও আদিবাসী এবং তাদের আয়ের প্রধান উৎসই বাঁশের কাজ। এছাড়া এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাঁশের সামগ্রী তৈরি ও ব্যবসার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এবং এর মাধ্যমেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে।

তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে কারিগররা বাঁশের বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী তৈরি করেন এবং তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাঁশের তৈরি সামগ্রী কিনে এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। তবে বাঁশের কারিগররা বিভিন্ন কারণে প্রাপ্য লাভ থেকে বঞ্চিত হন। এরমধ্যে হয়েছে বাঁশের অধিক দাম, কাঁচামালের অনিয়মিত সরবরাহ ও বিভিন্ন বাজারে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সমস্যা। অন্যদিকে প্লাষ্টিক সামগ্রীর সম্প্রসারণ সহজলভ্যতায় বাঁশের সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেও বাঁশ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ততটা লাভবান হতে পারছেন না।

ড. রেদওয়ানুর রহমান আরো জানান, পান বহনের জন্য ব্যাপকভাবে বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়। আর বিভিন্ন ফলের মৌসুমে বাঁশের ঝুড়ির ব্যবহার বেড়ে যায়। আম, টমেটো, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি ফল বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি ঝুড়িসহ অন্যান্য বাঁশজাত সামগ্রী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। 

তিনি মনে করেন, বাঁশজাত সামগ্রী তৈরি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আর চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারেন। আর এর মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব। বাঁশের তৈরি পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্যও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। 

বাঁশ শিল্পের প্রসারের জন্য বিভিন্ন সেক্টর থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নার্সারীর মালিকরা তাদের নার্সারীতে বাঁশের সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেন। নার্সারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সামাজিক বন বিভাগের সহযোগিতায় বাঁশের সামগ্রী তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাঁশের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি ও বাজারজাতের জন্য জরিপের উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাঁশশিল্প প্রসারের জন্য প্রস্তুতকারক ও পাইকারী বিক্রেতাদের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।

এছাড়া বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিদেশে রফতানির জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। 
বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন বাঁশ শিল্পকে রক্ষা ও সম্প্রসারণের জন্য সরকারি পর্যায়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি খাতে এই শিল্পের প্রসারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা ও নিশ্চিত করতে হবে।

তার মতে বাঁশ ব্যবসায়ী, বাঁশের সামগ্রী প্রস্তুতকারী ও এ খাতের ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আনা উচিত। এতে অবহেলিত বাঁশ শিল্পের প্রসার ঘটবে। 

এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাঁশ উৎপাদনকারী, বাঁশজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সবাই সমভাবে উপকৃত হবেন। মোট কথা, এতে সরকারের দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমও সফল হবে।

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে আমের বাজার

রাজশাহী: আমের রাজধানী বলে খ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার বৈরী আবহাওয়ার পরও জমে উঠেছে আমের বাজার। তবে দামও রয়েছে বেশ চড়া। আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আমের সমারোহ ঘটলেও দর কমার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার বৃহত্তম আমবাজার বানেশ্বর, চারঘাট, গোদাগাড়ী এবং নওহাটা এবং চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ বাজার, রহনপুর, মল্লিকপুর, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন, সদরঘাট ও তহাবাজারে গোপালভোগ, খিরসাপাত, খুদি খিরসা, মধু চুষকি, সাটিয়ার কেড়া, বৃন্দাবনী, টিক্কাফারাস, কালিভোগ, রানিভোগসহ নাবী জাতের গুটি আম বাজারে উঠেছে। 

গুটি জাতের বৃন্দাবনী, রানিভোগ, কালিভোগ আম ১৫’শ থেকে ১৬’শ টাকা, গোপালভোগ ২ হাজার থেকে ২৬’শ টাকা, খিরসাপাত ২২’শ থেকে ২৫’শ টাকা দামে কেনাবেচা হচ্ছে। তবে দাম বেশী হওয়ায় এবার আম ব্যবসায়ীরাও খুশী। কানসাটের আম ব্যবসায়ী আনসারুল হক জানান, জুনের মধ্যভাগে বিভিন্ন জাতের আম বাজারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলে আমের দাম কমে যাবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম জানান, এবার আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও গুটি আসে কম, তারপরও প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ায় আমের উৎপাদনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। তিনি জানান, জেলার মহানগরীসহ নয়টি উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৮ লক্ষ আম গাছ আছে।

চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য বিশেষজ্ঞ মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ২৪ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৯ লক্ষ আমগাছ রয়েছে। এবার তেমন ঝড়-ঝাপ্টা না হলেও কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের কারণে আমের আকার, রং ও স্বাদ বেশ ভাল হওয়ায় কৃষকরা অনেকাংশে লাভবান হবে। তবে চলতি মৌসুমে এবার জেলায় আমের প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তহাবাজারের আম ব্যবসায়ী শুকুর আলি জানান, ভোর হতে গভীর রাত থেকে পর্যন্ত আমচাষী ও ব্যাপারীদের ভিড়ে জমে উঠেছে আমের বাজারগুলো। বাগান থেকে আম পাড়া, টুকরী তৈরী, বাঁধাই ও ট্রাক বোঝাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে বাজারের লক্ষাধিক আমচাষী ও ব্যবসায়ী। জেলার সুস্বাদু আম কেনার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, চৌমুহনী, ফেনী, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে জেলায় আসা শুরু করেছে। 

কানসাটের আম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, চলতি আম মৌসুমে রাজনীতি সংকট (হরতাল, অবরোধ) দেখা না দিলে বৈরী আবহাওয়ার পরও কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখবে আম ব্যবসায়ীরা।

কানসাট আম আড়তদার সমিতির সভাপতি হাবিবুল্লাহ জানান, জেলার উৎপাদিত আমের ৫০ শতাংশ আম শিবগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত হয় এবং কানসাট বাজারটি উপজেলার মধ্যস্থানে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর আমের আমদানী ঘটে এবং বিক্রি হয়। জেলার ভোলাহাট, গোমসাপুর ও সদর উপজেলার উৎপাদিত আমের একটি বড় অংশ বিক্রি হয় কানসাট বাজারে। জানা গেছে কানসাটে প্রায় ৩৫০টি আমের আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৫কোটি টাকার আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এ জেলার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের দ্রুত আম পরিবহনে সহজলভ্য হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ আম বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। এছাড়া এর বাইরেও জেলার বড় বড় আম বাগানগুলো থেকে সরাসরি আম ব্যবসায়ীরা ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে থাকে।

শহরের আম ব্যবসায়ী হারুন জানান, জেলা শহরের প্রধান আম বাজারটি বসে তহাবাজারের মহানন্দা নদীর তীরে। প্রাচীন এই আমের বাজারে সদর, শিবগঞ্জ ও গোমসাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন নৌকাযোগে বিপুল পরিমাণ আম আসে। এখানে প্রতিদিন আম বিক্রি হয় কোটি টাকার উপরে। 

রহনপুর রেলষ্টেশনের সামনে প্রায় ১’শ ৫০টি আড়তে এবং জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন বাজারে ৫০টি আড়তে প্রতিদিন আমের বেচাকেনা হয় প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানান আম ফাউন্ডেশনের সম্পাদক মোজাম্মেল হক চুটু। পাশাপাশি পরিবহন, হোটেল ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো ব্যবসা হবে কয়েক কোটি টাকার। সাথে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনে চাঙ্গা হয়ে উঠছে জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বিষমুক্ত ও সুনাম অক্ষুণœ রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শতাধিক ভ্রাম্যমান আদালত ফরমালিন কিডস নিয়ে আমবাজার ও বাগানে বাগানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কার্বাইড ও কৃত্রিম উপায়ে আম পাঁকানোর কু-ফলের দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতামুলক সভা প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বেড়েছে

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতেই আবাদ হয়েছে বাদাম। বিশেষ করে পদ্মা নদীর বির্স্তীণ চরে বাদামের চাষাবাদ হয়েছে বেশি। মধুমতি ও কুমার নদীর চরেও এর চাষ হয়েছে। এই তিন নদীর ৫০টিরও বেশি চরে পাঁচ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে এবার বাদামের চাষ করেছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, আলফাডাঙ্গী, মধুখালী, সদরপুর, ভাঙ্গী ও বোয়ালখালী উপজেলার চরাঞ্চলে বাদামের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরপুর উপজেলার পদ্মার চরে চাষ হয়েছে বেশি। কৃষকেরা এখন ভালো ফলন আর দামের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যায় বাদামের ক্ষেত। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে ওইসব ক্ষেত। আর কিছু দিনের মধ্যেই গাছের গোছা ধরে টান দিলেই উঠে আসবে থোকা থোকা চীনা বাদাম। এসব ক্ষেতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। 

একদা নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো মানুষেরা চরাঞ্চলে বসবাস করে চরে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। কিছু কিছু চর বছরের অনেটা সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ওইসব চর যখন শুকিয়ে যায় তখন সেখানে একমাত্র বাদামই চাষ করা যায়। অন্য ফসল তেমন ভালো হয় না। সেখানে বাদামের ফলনই ভালো হয়। তাই দিনে দিনে চরাঞ্চলে বাদামের চাষাবাদ বাড়ছে। নিজের জমি না থাকলেও অনেকে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন। এভাবেই বাদাম চাষ বা শ্রমিকের কাজ করে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

সদরপুর উপজেলার দেয়ারা গ্রামের বাদাম চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর যাবৎ চরে বাদাম চাষ করছেন। চরের বালু মাটিতে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় তিনি বাদামে আগ্রহী হন। পরে দেখতে পান বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই তিনি বাদাম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।

ঢেউখালীর কৃষক সোহরাব মোল্লা এবার গতবারের তুলনায় বেশি জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে তিনি ভালো লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাদাম হইল মাটির নিচের গুপ্তধন। বাদাম চাষ কইরা আমাদের ভাগ্য বদলাইছে।’

চর নাছিরপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসি জানান, এ বছর আবহাওয়া বাদাম চাষের উপযুক্ত থাকায় ফলন অনেক ভালো হবে। এবার ফলন বাম্পার হবে বলেও তিনি আশা করছেন।

এদিকে ফরিদপুরের কিছু কিছ অঞ্চলে ইতোমধ্যে জমি থেকে বাদাম উঠানো শুরু হয়েছে। পরিমাণে কম হলেও বাজারে কাঁচা বাদাম আসছে। বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা বাদাম আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার সাতশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চরমানাইর এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এবার এখন পর্যন্ত যেসব জমি থেকে বাদাম উঠানো হয়েছে, তাতে একর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ বাদামের ফলন হয়েছে। তিনি জানান, এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শংকর চন্দ্র ভৌমিক জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৫ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের চাষ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৭ টন। তিনি বলেন, চরে অন্য ফসলের তুলনায় বাদামের উৎপাদন ভালো হয়। তাই আমরা চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফলে দিন দিন এখানে বাদামের চাষ বাড়ছে। তিনি জানান, বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে বাদাম। বাদাম চাষে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণে ভুমিকা রাখবে বিনা-২ জাতের তিল

মাগুরা: বিনা-২ জাতের উচ্চ ফলনশীল তিল দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বিনা-২ জাতের তিল দেশীয় সাধারণ জাতের তিলের তুলনায় এই তিল দ্বিগুণ ফলন উৎপাদনে সক্ষম। 

উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল নিয়ে মাগুরায় দু’টি মাঠ দিবসে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানী ও বিনা-২ তিলের উদ্ভাবক ড. এম এ মালেক জানান, মাথা পিছু দৈনিক ৩৫ গ্রাম হিসেবে দেশে ভোজ্য তেলের মোট চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপন্ন হয় মাত্র ২ লাখ মেট্রিক টন। বাকি যে ১৮ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল বাইরে থেকে আমদানি করা হয় তার মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টনই পামওয়েল। যেটা ভেজাল হিসেবে সয়াবিনসহ বিভিন্ন তেলে মিশ্রত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে তিল জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। এটি ভোগ্যপণ্য হিসেবে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন সাশ্রয়ী। তেমনি ফ্যাটসহ অন্যান্য উপাদান যে গুলোর অতিমাত্রা শরীরের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর তার পরিমাণ একবারই কম থাকায় এটি জনস্বাস্থ্যের জন উপাদেয়। এ ছাড়া এটি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সয়াবিনের মতোই স্বচ্ছ। এতে সাধারণ তিলের মতো তীব্র গন্ধ নেই। যে কারণে এটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব ব্যাপক । 

বিনার মহাপরিচালক ড. এ এইচ এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাময়িক জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ সক্ষম ও খরাসহিষ্ণু বিনা-২ তিলের জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়। যা এখন কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাষের জন্য কৃষি বিভাগ ও বিনা একসাথে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সাধারণত ফেব্র“য়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে চাষাবাদ করা যায়। দো’আশ হতে এটেল দো’আশ মাটিতে এটি চাষের উপযোগী। এর জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৮ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদন হয় ১.৮ টন। সাধারণ জাতে উৎপাদন হয় ০.৫ থেকে ০.৬ টন। বিনা-২ তিল ব্যাপকভাবে আবাদ করা গেলে দেশে প্রতি বছর যে ১৮ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব। 

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বেকারী ও ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে সাদা তিল ব্যবহার হয়ে থাকে। রপ্তানী পণ্য হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের বিনা জাতের সাদা তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এ তিলের বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারেন। 

সদর উপজেলার পশ্চিম রামনগর গ্রামের কৃষক ফিরোজ মোল্যা বিনা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রায় দেড় একর জমিতে বিনা-২ জাতের প্রর্দশনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে তিনি ২১ মণ তিল পাবেন বলে আশা করছেন। শালিখা আড়–য়াকান্দি গ্রামের কৃষক অলেক মোল্যা ১ একর জমিতে বিনা তিল চাষ করেছেন। যা থেকে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি। 

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বিনাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল চাষ হয়েছে। যা থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টন তিল উৎপাদিত হবে। 

Friday, June 6, 2014

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলের মানুষের ঝুঁকি বাড়ছে

বরগুনা: বরগুনার দক্ষিণ প্রান্তের তালতলী, পাথরঘাটা উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা বনাঞ্চল থেকে গাছ পাচার হচ্ছে নিয়মিতভাবে। টেংরাগিরি, সোনাকাটা, ফাতরা, হরিণঘাটার এই বনগুলোর বৃক্ষরাজি প্রাচীরের মতো কাজ করেছিল ২০০৭ সালের সিডরে। অর্ধেকের বেশী বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ২২০ কিলোমিটার গতিগের বাতাস ও জলোচ্ছাসের তোড়ে। ধীরে ধীরে পুন:জীবন ফিরে পাওয়া বন এখন উজাড় করছে বন দস্যুরা, গাছ মরছে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের (সাকসেশন) নিয়মেও।। শুধু বন-জঙ্গল নয়, লোকালয়ের গাছও কাটা পড়ছে নির্বিচারে। কেবলমাত্র ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা নয়, ভূখন্ডের তাপমাত্রার ভারসাম্যও টালমাটাল হয়ে পড়ছে গাছের আধিক্য কমে যাওয়ায়, মতামত বিশেষজ্ঞদের।  

বিশাল আকারের অনেকগুলো চর জেগে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ও পায়রা এবং বিষখালী নদীর মোহনায়। সাগরের লোনা পানি নদীগুলোতে ঢুকে লবণাক্ত করে তুলছে ফসলী জমি। পলি পড়ে নদীও হারাচ্ছে নাব্যতা। ধারণ করতে পাওে না বর্ষা কিংবা উজান থেকে নেমে আসা পানি। স্রোতে ভাঙ্গছে লোকালয় ও কৃষি জমি। মানুষ নিজেদের স্বার্থে ভরাট করছে খাল, বিল, জলাশয়। নির্ভরশীলতা বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির উপর। মানুষ সৃষ্ট এবং প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ুর চরম পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগের তীব্রতা ও ব্যাপকতার মাত্রা গত দুই দশকে প্রায় চারগুণ বেড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্যমতে ২০১৫ সাল নাগাদ দুর্যোগের কারণে উপকূলের ৫৪% ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। 

উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগামী জেলেরা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া ছিল অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি খারাপ। বর্তমানে তা আরও খারাপ। ওই বছর বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তর থেকে ৮৯টি সংকেত প্রদান করা হয়, যার মধ্যে জুলাই থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে ২২টি নিম্নচাপ এবং ঘনীভূত নিম্নচাপ ছিল ১২টি, যা তিন বা তার উর্ধ্বের সংকেতের আওতাভুক্ত ছিল। ঐ পরিস্থিতিতে জেলেদের জীবন জীবিকার ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। 
২০০৭ সালে পরপর দু’টি বন্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। পরের বছর ‘আইলা’। সে সময়ের ক্ষতি আজও মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধি জনিত জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই এই দুর্যোগগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া লবণাক্ততা, পানির স্তর নেমে যাওয়াসহ অপরাপর নিয়ামকের পরিবর্তন বহু ক্ষেত্রেই আকস্মিক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি না করলেও দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। 

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঝড়, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সংগঠিত হওয়ার সংখ্যা ও এগুলোর তীব্র হিংস্রতা বৃদ্ধি, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে এসব এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন. বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির কারণে বন্যা, আকষ্মিক বন্যা ও নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পায়। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তনের ফলে খরা প্রবণতা বৃদ্ধি, সারাদেশে তাপ, চাপ, বৃষ্টিপাতে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।

আইপিসিসি’র চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে কৃষির উৎপাদনশীলতা হ্রাস, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি, শিল্পায়ন ব্যাহত এবং পরিণতিতে জনজীবনসহ জাতীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন বিষয় নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে এমন সংগঠন এনএসএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আন্তর্জাতিক হিসাব অনুয়ায়ী ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে দুর্যোগের কারণে বিশ্বে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকসংখ্যা ছিল প্রতিবছরে ১৭৪ মিলিয়ন, ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৪০ মিলিয়ন। সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে বছরে ৩৭৫ মিলিয়ন এ।

এনএসএস’র দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপক সাবরিনা মমতাজ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফসলহীনতা, নদী ভাঙ্গন ও উপকূলীয় অঞ্চলে বারবার দুর্যোগ, কর্মসুযোগহীনতা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্বাস্তুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ৩০টি  কৃষি প্রতিবেশ জেলার প্রতিটিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এতে দেশের কৃষিখাত, অর্থনীতি, মানব সম্পদ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। 

Monday, June 2, 2014

নওগাঁর ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার’ কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে

নওগাঁ: নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় কালিগ্রাম ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার’ কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে পরামর্শ, তথ্য এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে এই পাঠাগার। 

২০০৮ সালে স্থানীয় উদ্যমী ব্যক্তিত্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষকের সন্তান হিসেবে বাল্যকাল থেকেই কৃষির প্রতি ছিল তার প্রচন্ড আগ্রহ। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতা করলেও এই আগ্রহ তিনি হারাননি। তিনি ভেবেচিন্তে দেখলেন কৃষকদের উন্নয়নে কৃষক পর্যায়ে কোন লাইব্রেরী নেই। 

তাই তিনি পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং এক্ষেত্রে কৃষকদের জ্ঞানার্জন করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারটি গড়ে তুলেছেন। এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি দেশী-বিদেশী কৃষি সম্পর্কিত বই পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। বর্তমানে তার এই লাইব্রেরীতে বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। 

কৃষকরা সরাসরি এই লাইব্রেরীতে এসে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, উৎপাদনের সঠিক সময়, সার কীটনাশকের ব্যবহার, জমি তৈরীর প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন করা হয়ে থাকে এখানে। কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ওইসব প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। এ কারণে ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম শাহ’র একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইব্রেরী, এলাকার কৃষকদের মান উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি উৎপাদনে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। 

জানা গেছে, তিনি নিজ অর্থে ক্রয় করে বিভিন্ন গাছের চারা এবং উন্নতজাতের বীজ এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকেন। এটিও ওই লাইব্রেরীর নিয়মিত কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিক কর্মসূচি। কৃষক এবং কৃষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জনকল্যাণমুলক কার্যক্রম সম্পৃক্ত রয়েছে এই কর্মসূচীর আওতায়। এলাকার তুলনামূলকভাবে দরিদ্র কৃষকদের প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া সন্তানদের মধ্যে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য তার ওই লাইব্রেরী চত্বর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ লক্ষে এলাকার ১৩৫ জন কৃষাণ কৃষাণীর মধ্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তারা এই কার্ড দেখিয়ে সেবা গ্রহণ করে থাকেন।

এখানে কৃষকদের সরাসরি কৃষি সম্পর্কিত তথ্যাদি ও পরামর্শ প্রদানের জন্য সেমিনারের উপযোগী মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ক্যামেরা, সাউন্ডসিষ্টেম ইত্যাদি সম্বলিত একটি সেমিনার কক্ষ রয়েছে। 

এই লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহ কৃষি ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৯২ সালে বৃক্ষরোপণে নওগাঁ জেলায় দ্বিতীয় পুরস্কার, ২০১১ সালে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল থেকে কৃষিতে স্বর্ণপদক এবং ২০১৪ সালে চ্যানেল আই কৃষিবিষয়ক নিবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। তার সফল কার্যক্রমের জন্য লাইব্রেরীটি ইতিমধ্যে জাতীয়পর্যায়ে একটি পরিচিতি লাভ করেছে। কৃষি গবেষণা  কেন্দ্রের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ওয়াইজ কবির, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই লাইব্রেরীটি পরিদর্শন করেছেন এবং এ সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। 

মান্দা উপজেলার কালিগ্রামের কৃষক মফিজউদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান এবং ছোট মুল্লুক গ্রামের কৃষক ফহিমুদ্দিন সরাসরি এই লাইব্রেরীর সাথে যুক্ত থেকে কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল পাঠাগারটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি মনে করেন এই পাঠাগারটি এলাকার কৃষি ও কৃষকদের মান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। 

Sunday, June 1, 2014

হেলালকে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান এনে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা

হবিগঞ্জ: যে বয়সে গ্রামের আর দশটি ছেলে মাঠে খেলা করে এবং ব্যস্ত থাকে আপন ভূবনে,তখন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কেউন্দা গ্রামের হেলালকে নেমে যেতে হয়েছে জীবন যুদ্ধে। নিজের এবং দুই বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগানো ও তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পড়ে তার উপর। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য যুবক হেলাল এই দায়িত্বে চোখে সর্ষে ফুল দেখলেও দমে যায়নি। নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে। আলাদীনের চেরাগের ন্যায় তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে এখন স্বাবলম্বী যুবক হেলাল। সে অনেক তরুণের কাছে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

বছর চারেক পুর্বে নিজের লেখাপড়া ও বোনদের লেখাপড়ার জন্য গ্রাম থেকে হবিগঞ্জ শহরে আসে হেলাল উদ্দিন। দরিদ্র বাবার একমাত্র ছেলে হেলাল। অভাবের কারণে ভালো একটি কলেজে লেখাপড়া করতে পারেনি সে। ইচ্ছে ছিলো একটি ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। কিন্তু তা আর সাহস করতে পারেনি। কারণ যার বাবার প্রতিমাসে এক হাজার টাকা দেয়ার র সাধ্য ছিলো না সে কিভাবে একটি ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। এজন্য তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। 

কম্পিউটার চালানোর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে হেলাল হবিগঞ্জ শহরে একটি পত্রিকায় কাজ নেয় মাসে ২ হাজার টাকার বেতনে। এই টাকা দিয়ে কিভাবে নিজের ও বোনদের লেখাপড়াসহ তাদের ভরণপোষণ করবে হেলাল সেই চিন্তায় আরও কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তা করে। সেই চিন্তা থেকে  হঠাৎ ওয়েব সাইট ডিজাইন শিখার ইচ্ছে জাগে তার। কিন্তু পত্রিকা অফিসের কাজে সরকারি ছুটি ব্যতিত আর কোন ছুটি ছিল না। এছাড়া হবিগঞ্জ  শহরে এমন কোন ইনস্টিটিউট ছিল না যেখানে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শিখানো হয়। কিন্তু হেলাল চায় যেভাবেই হোক এই কাজটা শিখতে হবে।  

রাত ২টা পর্যন্ত পত্রিকা অফিসে কাজ করে হেলাল বাকি রাতটুকু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করতে থাকে কিছু শেখার জন্য। এক পর্যায়ে ওয়েব ডিজাইনের কিছু কাজ শিখেও ফেলে হেলাল।  কিছু কাজ শিখার পরপরই সে ওয়েব ডিজাইনের কাজও পেয়ে যায়। সেই কাজ করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। 

প্রথম অবস্থায় কাজ পেতে কষ্ট হতো। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে কাজ বাড়তে থাকে তার। সাড়ে ৩ বছর কাজ করে হেলাল ৫৫টি ওয়েব সাইট তৈরী করে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। এখন মাসে সে ৪/৫টি এমনকি কোন মাসে তার বেশিও ওয়েব সাইট তৈরির কাজ পায় হেলাল। ওয়েব ডিজাইনের কাজ করে এখন হেলাল প্রতি মাসে আয়  করে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ঘরে বসেই আয়ের জাদুমন্ত্র পেয়ে এখন তার পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। নিজের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভালভাইে চলছে বোনদেরও লেখাপড়া। 

শুধু ওয়েব সাইট তৈরি নয় এখন হেলাল বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগযোগ, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে ওয়েব ডিজাইন ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে। 

হেলাল উদ্দিন বলেন, আসলে মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। ইচ্ছে করলেই নিজেই তার জীবনকে উজ্জ্বল করতে পারে। দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর কাজ করে আজ আমি একজন পরিপূর্ণ ওয়েব ডেভলপার। আর আমার কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার মা-বাবা। হেলাল বর্তমানে বিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি হবিগঞ্জ শহরে একটি অফিস নিয়ে ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ পরিচালনা করে আসছেন। তার কোম্পানির নাম দিয়েছেন ‘হেলাল হোস্ট বিডি’। 

হেলাল উদ্দিন ওয়েব ডিজাইনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘বাইরে চাকরির পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরার দরকার নেই। যে কেউ  চাইলেই তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশে সে সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং অনেকে কাজ করে সফলও হয়েছেন।

হবিগঞ্জ লিংক টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রদীপ দাস সাগর বলেন, সাধনা করলে যে কেউ সফল হতে পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হেলাল উদ্দিন। ঘরে থাকা কম্পিউটার আর ল্যাপটপ যে হতে পারে টাকার খনি সেটি সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন হেলাল উদ্দিন। 

হেলাল উদ্দিনের সফলতার পিছনে ছিল শ্রম, নিষ্ঠা আর আকাঙ্খা। এই বিষয়গুলো থাকলে কাউকে বিদেশে যেতে হবে না। দেশেই নিজেদেরকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। হেলাল উদ্দিন সেই উদাহরণটুকুই সৃষ্টি করেছেন।

Saturday, May 31, 2014

বুড়িগঙ্গা তীরে পোশাক শিল্পের নীরব বিপ্লব


ঢাকা: বুড়িগঙ্গার তীরে ঘটে চলেছে পোশাক শিল্পের নীরব বিপ্লব। এখানে তৈরি  পোশাক কমপক্ষে ৩৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ছোট বড় প্রায় ১০ সহস্রাধিক গার্মেন্টসে তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে দেশের বাজারে। নগদ অর্থে যার পরিমাণ দৈনিক পঞ্চাশ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাজধানীর সদরঘাট ও শ্যামপুর, অন্য তীরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়ন। আগানগরের ঠিক পশ্চিমে বাংলার চীন নামে পরিচিতি পাওয়া জিনজিরা, মোগল আমলের স্মৃতি বিজড়িত জিঞ্জিরা প্রাসাদ। এসব স্থানের ঐতিহাসিক পরিচিতি কালের বিবর্তনে চাপা পড়ে গেলেও বিভিন্ন শিল্পের কারণে এখন আবার জেগে উঠছে কেরানীগঞ্জ।

আগানগর ও শুভাঢ্যায় গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। স্বাধীনতার পর সীমিত পরিসরে শুরু হওয়া এই গার্মেন্টস পল্লী ধীরে ধীরে ব্যাপকতা লাভ করেছে। 

বর্তমানে এই পল্লী অভ্যন্তরীণ পোশাকের প্রায় ৬০ ভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতি’র তথ্যমতে, এখানে দিনে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের পোশাক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানকার গার্মেন্টস পল্লীতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

মফস্বল শহরগুলোর বিপণি বিতান তো বটেই, রাজধানীর অভিজাত শপিংমলগুলোতে এখন বিদেশি কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে হাতে উঠছে এখানকার পোশাক। এমনকি রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, দুবাই, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৩৫টি দেশে।

দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে এ গার্মেন্টস পল্লীর বিকাশে উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগিতা নেই সরকারি তরফে। এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের একান্ত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে নিচ্ছেন সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র এই শিল্পকে। 

পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, গেঞ্জি, স্যুট-ব্লে¬জার, বোরকা, সব রকমের শীতবস্ত্র, শিশুদের কাপড় থেকে শুরু করে নানা ধরনের পোশাক পাওয়া গেলে এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী বিশেষভাবে বিখ্যাত জিন্স ও গেভার্ডিন প্যান্টের জন্য। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সিংগাপুর, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামিদামি ব্রান্ডের জিন্স ও গেভার্ডিন প্যান্টের আদলে প্রস্তুতকৃত এখানকার প্যান্ট বিদেশি প্যান্ট হিসেবে দেশের বড় বড় শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে দেদার। মফস্বলের বিপণী বিতানগুলোতেও এর অনেক কদর।

এক্সপোর্ট গার্মেন্টের ফেব্রিকস কিনে এখানের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লীর কারিগরেরা নিজস্ব আদলে তৈরি করছেন এসব প্যান্ট। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি অংশ আবার বড় পোশাক কারখানার আংশিক ত্র“টিযুক্ত কাপড় বা ঝুট সংগ্রহ করে তৈরি করছেন চমৎকার সব পোশাক। 

উল্লেখ্য, দেশের বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মতো এখানে শমিক অসন্তোষের ঘটনা খুব একটা ঘটে না। ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীরা সারাক্ষণ কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গেই লেগে থাকেন দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদে। 

চরকালিগঞ্জ নুর সুপার মার্কেটে অবস্থিত ইত্যাদি গার্মেন্টসের মালিক তরুণ ব্যবসায়ী মো. বিপ্লব হোসেন (৩০)। পড়াশুনা শেষ করে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। বিপ্লব হোসেন জানান, রাজধানীর মিরপুর, সাভার ইপিজেড, গাজীপুর, টংগী, নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল থেকে জিন্সের ঝুট ফেব্রিক্স স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা মণে সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রথমে সাইজ, মান ও কালার অনুযায়ী ভাগ করি। এরপর সেগুলোকে কাটিং করি। তারপর বিদেশি প্যান্টের আদলে কম্পিউটারাইজড মেশিনে এমব্রয়ডারি করে দক্ষ দর্জি দিয়ে সেলাই করা হয়। সেলাই ও এমব্রয়ডারির পর সেগুলোকে ওয়াশিং মেশিনে কালার কিংবা বিশেষ অংশে ভিন্ন রূপদান করা হয়। তিনি বলেন, ছেলেদের প্যান্টের চেয়ে লেডিস প্যান্টের চাহিদা অনেক বেশি। ছোট বড় সবার জন্যই এই লেডিস প্যান্টের চাহিদা রয়েছে। উপমহাদেশে আগে ভারতে এই লেডিস প্যান্টের চাহিদা বেশি ছিল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এর চাহিদা বেড়েছে। আমাদের তৈরি প্যান্ট ১৬০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এখান থেকে কিনে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন আধুনিক শপিংমলে ১২০০ টাকার জিন্সের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ৩৫০০ টাকায়। 

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার বালিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জিন্স প্যান্ট তৈরির কারিগর রফিক হাওলাদার বলেন, এখানে যেমন রিজেক্ট কাপড় দিয়ে প্যান্ট বানানো হয়, তেমনি নতুন কাপড় দিয়েও প্যান্ট বানানো হয়। আমরা জাপান, চীন, থাইল্যান্ডের তৈরি প্যান্টের মত একই রকম প্যান্ট হুবহু তৈরি করতে পারি। অনেক সময় বিদেশি প্যান্টের চেয়েও আমাদের ফিনিশিং ভালো হয়। 

কেরানীগঞ্জ গামের্ন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ শেখ বলেন, আমাদের তৈরি কাপড়ের মান দিন দিন ভাল হচ্ছে। তাই বিগত সময়ের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। গার্মেন্টস পল্লীতে ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এখানে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। 

সমিতির সদস্য আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী হাজী আসাদ খান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন লাভবান হতে পারেনি। ব্যাংক ঋণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। তবে এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা, বিদ্যুত-গ্যাস সুবিধা পর্যাপ্তকরণ, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হলে এখানকার ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী কেবল দেশেই নয়, গোটা এশিয়ার মধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করেন অনেকে।

নওগাঁয় পাম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

নওগাঁ: নওগাঁয় পাম চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নওগাঁ সদরসহ মহাদেবপুর, মান্দা, ধামইরহাট, পতœীতলা এবং রানীনগর উপজেলায় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ২০/২৫টি পাম বাগান গড়ে উঠেছে। মুলত দোঁয়াশ মাটিতে পাম চাষ হয়ে থাকে। পাম চাষের প্রয়োজনীয় রৌদ্রতাপ, আর্দ্রতা এবং গড় বৃষ্টিপাত সবকিছুই নওগাঁ’র জমিতে বিদ্যমান বলেই এখানে পাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এখানকার উৎসাহী কিছু সচেতন মানুষ পাম চাষ শুরু করেছেন। আর এতে সহযোগিতা করছে গ্রীন গোল্ড এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

তারা পাম গাছের চারা সরবরাহ, প্রচার এবং প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ থেকে পাম গাছের চারা সংগ্রহ করে স্থানীয় পর্যায়ে উৎসাহী পামচাষীদের মধ্যে চার সরবরাহ করছে এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে। 

জেলার অনেকের মত নওগাঁ হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক ডাঃ ওমর আলী তাঁর ২৫ শতক জমিতে এবং মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার তার ১ বিঘা জমিতে পাম চাষ করেছেন। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, পাম চাষে খরচ তেমন নেই। প্রতিটি পাম চারার মুল্য সর্বোচ্চ ১শ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৮০টি চারা লাগানো যায়। সে হিসেবে প্রথম বছরে চারার মুল্য বাবদ খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। সার কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় আরও ৮ হাজার টাকা। বাগান তৈরির দ্বিতীয় বছর পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মত। আর কোন খরচ নাই। একটি গাছে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি কাঁদি আসে। প্রতিটি কাঁদিতে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত ফল ধরে থাকে। একটি গাছ থেকে গড়ে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০ কেজি পাম তেল পাওয়া যায়। 

গ্রীন গোল্ড এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী রেজাউর রহমান টুকু জানান, গাছ থেকে সরাসরি পাম ফল সংগ্রহ করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তাতে চাপ দিয়ে তেল সংগ্রহ করা যাবে। আবার ফলগুলোকে সরিষার তেল উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত কাঠের ঘানিতে নিষ্কাশন করেও তেল সংগ্রহ করা যাবে। বাড়িতে গরম পানিতে সিদ্ধ করে অথবা কাঠের ঘানিতে নিষ্কাশন করে সংগৃহীত পাম তেল সরাসরি বিভিন্ন তরকারি রান্নাতে ব্যবহার করা যাবে।

কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, নওগাঁসহ বাংলাদেশে পাম চাষ লাভজনক। চাষের সম্ভাবনাও রয়েছে। কাজেই তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রতিটি বাড়িতে ৫/৬টি করে পাম গাছের চারা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী ২/৪ বছরের মধ্যে মানুষ প্রতিটি বাড়িতেই পাম গাছ লাগাবেন। তিনি বলেন, পাম ফল থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে সঠিক প্রক্রিয়ায় তেল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি। তেল নিষ্কাশনের পরিশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হলে এ দেশের মানুষের মধ্যে পাম চাষের উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে। তিনি আরও জানান, শুধু তেল নয় বাইপ্রডাক্ট হিসেবে পাম ফল থেকে প্রাপ্ত চর্বি দিয়ে সাবান, গ্লিসারিন, বিভিন্ন রকমের কসমেটিক্স এবং ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করা যাবে। 

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শরীফুল ইসলাম খান বাংলাদেশে পাম চাষের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, পাম ফল থেকে তেল নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হলে এবং তেল নিষ্কাশনে সহজ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হলে চাষীরা পাম চাষে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। তিনি সয়াবিন তেলের চেয়ে পাম তেল অধিক স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন, পাম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেল সয়াবিনের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটবে।  

Wednesday, May 28, 2014

হবিগঞ্জে বাম্পার ফলন: বিদেশেও রফতানি হচ্ছে হবিগঞ্জের কাঁঠাল

হবিগঞ্জ: জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধু মাস। কারণ প্রচণ্ড গরমে চারিদিকে পাকতে শুরু করেছে আম-কাঁঠাল। এই মধু ফলের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ দিতে বন্ধ হয়ে গেছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যার বৃদ্ধি আর বন উজাড় হওয়ার জন্য এই মধু ফলও এখন দূর্লভ হতে চলেছে। আবার এই ফল উৎপাদন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তবে হবিগঞ্জে এবছরের চারিদিকে মৌ মৌ ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। গাছগুলোর শাখা ভরে উঠেছে এই ফলে। 

পাহাড় আর বনাঞ্চল অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল আসছে পাইকারী বাজারে। এখন চলছে কাঁঠাল বিক্রির ধুম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু এই কাঁঠাল ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ফলের আড়তে।

হবিগঞ্জের মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তুলনামূলকভাবে মিষ্টি ও সুস্বাধু। তাই এখানকার কাঁঠালের চাহিদা বেশি। হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো কাঁঠালের বাগান। বাড়ির আঙ্গিনা ও রাস্তার পাশেও দেখা যায় কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল বাজারে আসে। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর সূত্রে জানা যায়, এবছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ১২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন।

কাঁঠালকে বলা হয় বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফলের স্বাদে যেমন অনন্য তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। তাই সকলস্তরের লোকজনের কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ গ্রামের দরিদ্র লোকজন এই সময়ে তাদের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে এই কাঁঠাল। তারা বাজার থেকে কাঁঠাল এনে পরিবারের সকলে মিলে একবেলা আহারের পরিবর্তে পেট ভরে খেয়ে থাকেন। কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে তারা রেখে দেন বাড়িতে। পরবর্তীতে এই বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। কাঁঠালের মুচি যেটি ঝড়ে যায় সেটিকেও ভর্তা হিসাবে খাওয়া হয়। অর্থাৎ একটি কাঁঠালের বহুমুখী উপযোগ ভোগ করেন তারা। 

হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারী বাজার মুছাই। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ৎ। এই আড়তে বিক্রির জন্য কৃষকরা তাদের কাঁঠাল নিয়ে আসেন। প্রতি ১শ’ হিসাবে নিলামের মাধ্যমে এই কাঁঠাল বিক্রি হয়। পাইকাররা নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন কাঁঠাল কিনতে। ছোট সাইজের কাঁঠাল প্রতিশ’ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা করে। তবে বড় কাঁঠালের দাম বেশি। সামনে কাঁঠালের দাম আরও কমবে। মুছাই থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এই কাঁঠাল। এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে হবিগঞ্জের কাঁঠাল।

মুছাইর ফলের আড়তের মালিক সফিকুর রহমান জানান, এ বছর কাঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। এখন ভাল দাম থাকলেও সামনে যখন ব্যাপকভাবে ফসল আসতে থাকবে তখন দাম কমে যাবে। তিনি আরও জানান, তাদের কাছ থেকে ঢাকা ও সিলেটের পাইকাররা কাঁঠাল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। বড় ও ভাল কাঁঠাল লন্ডন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশী কাঠাল খুব বেশি পছন্দ করে।

সিলেট থেকে মুছাই আড়তে আসা আব্দুল জলিল জানান, তিনি প্রায়ই এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এখানকার কাঁঠাল তুলনামূলকভাবে ভাল এবং দামও কম।

মুছাই বাজারে কাঁঠাল কিনতে হবিগঞ্জ শহর থেকে নজরুল আলম চৌধুরী জানান, বাজারে ফরমালিন আর কারবাইড মেশানো থাকায় এখানে এসেছি কাঁঠাল কিনতে। এখানকার কাঠাল সম্পুর্ণ নির্ভেজাল।

বাগান মালিক ইব্রাহিম মিয়া জানান, আমাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়। কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা কোন যতœ নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম। তবে এ বছর বেশি ফলন হওয়ায় দাম কম হওয়ায় আশংকা করছেন তিনি।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মন্ত্রী উটিয়াম টমপেয়ার জানান, তার বাগানের গাছগুলোতে কাঠালের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভাল হয়েছে। বাজারে দামও ভাল। গরম বেশি থাকায় একটু আগে থেকেই কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে। তবে জুন-জুলাই মাস হবে এর ভরা মৌসুম। 

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোপাল চন্দ্র দাস জানান, সরকারিভাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠাল ফলের ফলন বাড়ানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঁঠাল উৎপাদন করলে একই সাথে ফসল এবং কাঠ পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এছাড়ও কাঁঠাল উৎপাদনে তেমন যতেœরও প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যামুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘদিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।