Thursday, March 27, 2014

ফুলের ঝাড়– তৈরী করে স্বচ্ছল হবিগঞ্জের পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দারা

হবিগঞ্জ : পাকা মেঝে আর টাইলস লাগানো বাসা পরিস্কার করতে গৃহিনীদের অন্যতম পছন্দ ফুলের ঝাড়–। বেশির ভাগ বাসা বাড়িতেই দেখা যায় এই ঝাড়–র ব্যবহার। বিদেশেও যাচ্ছে এই ঝাড়–। আর এই ঝাড়– তৈরীর প্রধান উপকরণ ফুলের অন্যতম উৎসস্থল হল হবিগঞ্জের পাহাড়ী এলাকা। এখানকার দরিদ্র লোকজন ফুলের ঝাড়– তৈরী করে স্বচ্ছলতা পেয়েছেন।

হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় প্রাকৃতিকভাইে বেড়ে উঠে বাঁশ, ছন, লতাপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ। এর মাঝেই এক ধরনের ফুল থেকে তৈরী হয়ে থাকে ঝাড়–। এই ফুলকে স্থানীয়ভাবে রেমা বলা হয়। বন্য এই ফুলের ঝাড়– এখন পাহাড়ে বসবাসরত দরিদ্র লোকজনের আয়ের অন্যতম উৎস।

হবিগঞ্জের বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও নবীগঞ্জের কিছু এলাকা পাহাড় সমৃদ্ধ। এই সমস্ত পাহাড়ে উৎপাদিত ফুল থেকে প্রতিবছর ৪/৫ লাখ পিস ফুলের ঝাড়– তৈরী হয়। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। শত শত পরিবার এই ঝাড়– তৈরী এবং বিক্রি করে পরিবারের আয় বাড়াচ্ছেন।

হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সীমান্ত এলাকায় মুচাই পাহাড় নামে একটি পাহাড় রয়েছে। বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ অনেক বাঙালি পরিবার। সেখানে বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা পাহাড়ের ওপরই নির্ভরশীল।

আলিয়াছড়া পাহাড়ের রূপসী বস্তি বা আলিয়াছড়া বস্তিতে যাদের বসবাস তাদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন। মূলত বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। পাহাড়ের উপর ছোট ছোট কুটিরে তাদের বসবাস। বাগানে কাজ করার পর তাদের হাতে যে সময় থাকে সেই সময়ে বাড়ির আঙ্গিনায় অনেকেই ফুলের ঝাড়– তৈরী করেন। পরে তা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহরে পাইকারী মূল্যে বিক্রি করেন। অনেক সময় পাইকাররাও এসে এই ঝাড়– কিনে নিয়ে যায়।

রূপসী বস্তির বাসিন্দা মনর উদ্দিন জানান, পাহাড়ে কাজ শেষে ফেরার সময় জঙ্গল থেকে কান্ডসহ ফুল সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে রোদে শুকানোর পর তা সাইজ করা হয়। ২ থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত ফুলটিকে রেখে অবশিষ্ট অংশ লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পরে ১৫/২০টি ফুলকে একত্রিত করে প¬াস্টিকের ফিতা দিয়ে মুড়িয়ে ঝাড়ু তৈরী করা হয়। অবসর সময়ে কাজ করে তিনি প্রতিদিন ৮/১০টি ঝাড়– তৈরী করেন। এভাবে মৌসুমে হাজার থেকে দেড় হাজার ঝাড়– তৈরী করেন তিনি।

মনর উদ্দীন আরও জানান, ৭/৮ বছর যাবৎ তিনি এই কাজ করে আসছেন। এতে করে তার অবসর সময়টা কাজে লাগছে। পাশাপাশি সংসারের অভাব দূর হয়েছে। ৬ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানের জনক মনর উদ্দিন এই বিশাল পরিবারের ব্যয় নির্বাহে ঝাড়– বিক্রির টাকা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি জানান, প্রতিটি ঝাড়– তৈরি করতে তাদের ৫/৬ টাকা খরচ হয়। সেই ঝাড়– পাইকারী মুল্যে বিক্রি হয় ৭০ টাকা করে। এতে তাদের শ্রম কাজে লাগছে।

পাহাড়ের আরেক বাসিন্দা আবুল কাসেম জানান, ঝাড়– তৈরির ফুল কিনতেও পাওয়া যায়। শ্রমিকরা কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই ফুল কেটে নিয়ে আসেন। এক এক আটি ফুল বিক্রি হয় ৩০/৪০ টাকায়। যারা ফুল কিনে এবং শ্রমিক ব্যবহার করে ঝাড়– তৈরি করেন তাদের প্রতি ঝাড়–তে খরচ পড়ে ৩০/৩৫ টাকা।

রূপসী বস্তির বাসিন্দা মিজানুর রহমানও প্রতি মৌসুমে তৈরী করেন হাজারের উপর ঝাড়–। তিনি জানান, ঝাড়– বিক্রির বাড়তি আয় থেকে তার পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। 

মুছাই পাহাড়সহ হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ী এলাকার যে সকল স্থানে এখনও আবাদ হয়নি সেখানেই এই ফুল বেশী উৎপাদন হয়। বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকেও এই ফুল হয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিপক্ক ফুল আহরণ করা যায়। যারা ফুলের ঝাড়– তৈরী করেন তারা ওই সময়ে সারা বছরের জন্য ফুল সংগ্রহ করে রাখেন। পরে অবসর সময়ে ঝাড়– তৈরী করেন। পাহাড় ও আশেপাশের এলাকার লোকজন নিজেদের ব্যবহারের জন্যও এই ঝাড়– তৈরি করেন।

এক সময়ে অবহেলায় বেড়ে উঠা এই বন্য ফুলের এখন অনেক কদর। এই ফুল অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল আবাদ ও ঝাড়– তৈরির শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন পাহাড়ের অধিবাসীরা। 

Sunday, March 23, 2014

জাহাজ নির্মাণেই একদিন বিশ্ব জয় করবে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম: নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। সরকার এ শিল্পের প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে আরো মনোযোগী হলে আগামীতে এ শিল্পকে ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন বিপ্লবের সূচনা ঘটবে। পরিবেশ দূষণের দায় এবং ‘জাহাজ ভাঙা শিল্পের বাংলাদেশ’ অপবাদ ঘুচিয়ে পৃথিবীর বড় বড় অভিজাত ‘জাহাজ নির্মাণ’ করেই একদিন বিশ্ব জয় করবে বাংলাদেশ। এমনই আশা করছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। 

পাল তোলা কাঠের জাহাজ যখন সাত সমুদ্র পাড়ি দিত সে যুগে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছিল জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিশাল অবকাঠামো। চট্টগ্রামে নির্মিত বাণিজ্যতরী ও রণতরীর কদর ছিল বিশ্বব্যাপী। রফতানি হতো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। প্রায় একশ’ বছর পর বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ঐতিহ্য আবার ফিরে এসেছে। শুধু তাই নয়, জাহাজ নির্মাণে এ মুহূর্তের বিশ্ববাজারের বিশাল চাহিদা কাজে লাগানো সম্ভব হলে এ খাতটি দেশের বিদ্যমান সকল রফতানি খাতকে ছাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রথম স্থানে উন্নীত হবে অচিরেই। 

উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)-এর নীতিমালায় ২৫ বছরের বেশি পুরনো জাহাজ সমুদ্রে চলাচল না করার বিধান করা হয়েছে। আইএমও’র এ নির্দেশনার কারণে কেবল ইউরোপীয় দেশগুলোতেই ২৫ বছর বা তার বেশি বয়েসী প্রায় ৩ হাজার জাহাজের নিবন্ধন বাতিল হচ্ছে। এর স্থলে সমসংখ্যক নতুন জাহাজ যোগ করতে হবে। 

জানা গেছে, বিশ্বে প্রতি বছর সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বাড়ছে ৩ শতাংশ হারে। সে হিসেবে বিশ্বের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক অবস্থায়ও চাহিদা মাফিক জাহাজ নির্মাণে সমর্থ নয়। সেখানে হঠাৎ করে এ বিশাল সংখ্যক জাহাজ নির্মাণ কীভাবে হবে তা নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন সামুদ্রিক জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিরাট সংকটই বাংলাদেশি জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। 

এ সংকটের কারণেই বিশ্ববাজারে এ মুহূর্তে প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলারের জাহাজ নির্মাণের অর্ডার রয়েছে। এর মাত্র শতকরা দুই ভাগ কাজও যদি বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পায়, তাহলেও প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের (৬০,০০০ কোটি টাকা) বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। 

ইতোমধ্যে দেশিয় প্রযুক্তি ও লোকবল ব্যবহার করে দেশের শিপবিল্ডার্সগুলো যাত্রীবাহী জাহাজ, ড্রেজার, অয়েল ট্যাংকার, টাগবোট, ফিশিং বোটসহ নানা ধরনের যান্ত্রিক নৌযান নির্মাণে সফলতা দেখিয়েছে। এ সুবাদে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সুনাম এখন ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে। বিশ্বের অন্যতম জাহাজ নির্মাণকারী দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ভারতের সবগুলো শিপইয়ার্ড বছর দেড়েক আগে থেকেই ৫ বছরের জন্য অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই ক্রেতারা জাহাজ কেনার জন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বিকল্প দেশ খুঁজছে। এই সুযোগটা বাংলাদেশি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছে।

এদিকে জাহাজ নির্মাতারা সরকারি উদ্যোগে জাহাজ নির্মাণ শিল্প জোন স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে ১৫টি শিপইয়ার্ড নিয়ে জাহাজ নির্মাণ জোন গড়ে তোলা সম্ভব। দেশিয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্যারান্টি সার্টিফিকেট পশ্চিমা দেশগুলো গ্রহণ করতে চায় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টির ব্যবস্থা করে এবং ঋণের সুদ কিছুটা কম করা হয় তাহলে জাহাজ নির্মাণ ব্যয় অনেকটা কমে যাবে। 

বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় শতাধিক জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠান রফতানিযোগ্য জাহাজ নির্মাণ করছে। এরমধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড, ফিসার শিপইয়ার্ড, মেঘনা ঘাটের আনন্দ শিপইয়ার্ড, খান ব্রাদার্স শিপইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জের এনইএসএল শিপইয়ার্ড ও দেশ শিপইয়ার্ড। 

কর্ণফুলীর তীরে গড়ে ওঠা ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও পাকিস্তানে সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি করে সুনাম কুড়িয়েছে। রফতানির জন্য আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ নির্মাণের অর্ডার পেয়েছে। এ পর্যন্ত ছোটবড় প্রচুর জাহাজ নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি । 

আনন্দ শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণশিল্পের পথিকৃৎ বলা হয়। ১৯৯২ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ড দেশে সর্বপ্রথম বিশ্বমানের (ক্লাস শিপ) জাহাজ নির্মাণ করে। এরপর ২০০৬ সালে মালদ্বীপে দুটি কার্গো জাহাজ রফতানির মাধ্যমে জাহাজ রফতানি বাণিজ্যে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এই শিপইয়ার্ড ও পর্যন্ত ৩শ’টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে। রফতানি করেছে প্রায় এক ডজন জাহাজ। আরো কয়েকটি জাহাজ রফতানির তালিকায় রয়েছে। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ে জাহাজ নির্মাণ শুরু করে কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি জাহাজ তৈরি করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাহাজ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি। তাদের অনেকে জানেন না তাদের নিজ দেশে অনেক জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে ওঠেছে। এমনই একজন সিঙ্গাপুরের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশি কর্মী আবদুল করিম। ভাবতেই পারেননি দেশেই তিনি একই ধরনের কাজ পাবেন।

৩৫ বছর বয়েসী আবদুল করিম বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ণ মেরিন-এ যোগ দেন। এখানে বর্তমানে প্রতি ১২ জনে একজন কর্মী রয়েছেন, যারা একসময় বিদেশি কোন শিপইয়ার্ডে কাজ করতেন। করিম জানালেন, ‘সিঙ্গাপুরের চেয়ে এখানে আমার বেতন প্রায় অর্ধেক। কিন্তু সার্বিকভাবে বাংলাদেশে আমি ভালো আছি এবং আমি আমার পরিবারের কাছে থাকতে পারছি।

বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে শত শত কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চল। বিস্তীর্ণ সমুদ্র তীর, নদী তীর। আগামীদিনে এ অব্যবহৃত উপকূল জুড়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠলে এ সম্ভাবনাময় খাতকে ঘিরেই হয়ত একদিন এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

Sunday, March 16, 2014

মাদারীপুরে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

মাদারীপুর: মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ও সদর উপজেলার মস্তফাপুর পালপাড়ায় তৈরি প্রাচীনতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না মৃৎশিল্পের নকশা করা নানান রকম বাহারী সামগ্রী। মৃৎশিল্পীরা কোন রকমে টিকিয়ে রেখেছেন পূর্ব পুরুষের এই ঐতিহ্য।

জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার খালিয়া এলাকা এক সময় মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ৭ পুরুষ আগে তারা এসেছিলেন যশোর থেকে। যশোরের হরিচরণ পাল আর গুরুচরণ পাল দু’জনে আড়িয়াল খাঁ নদে’র তীরবর্তী এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে শুরু করেছিলেন এই পেশা। কালের পরিক্রমায় মৃৎশিল্পের কদর কমে গেলেও এই কুমারপাড়ার কয়েকটি পরিবার নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। তারা কারুকার্য খচিত মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল, কলসি, কড়াই, সরা, মটকা, পেয়ালা, বাসন-কোসন, মাটির ব্যাংকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা রকমারী তৈজসপত্র তৈরি করছেন। 

স্থানীয়ভাবে মাটির সামগ্রী তৈরিকারী মৃৎশিল্পীদের বলা হয় কুমার। এককালে বিভিন্ন অঞ্চলে এ কুমার সম্প্রদায়দের নিয়ে গড়ে উঠেছিল কুমারপাড়া। কালের আবর্তনে কুমারপাড়া বিলীন হতে চলেছে। এখন টিকে থাকা দু-একজন কুমারও বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। মাটির সামগ্রীর চেয়ে টেকসই সামগ্রীর সহজলভ্যতার কারণে মৃৎশিল্পের চাহিদা নেই। তাই অনেকে ঐতিহ্যগত পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। 

জানা গেছে, যারা এখনো পৈত্রিক পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন তারা অতিকষ্টে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব দরিদ্র কুমার পরিবারগুলোর আর্থিক সংগতি না থাকায় তারা অধিক মাটি কিনে বেশি পরিমাণে জিনিস উৎপাদন করতে পারেন না। ফলে তারা খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না। এতে অর্থনৈতিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

খালিয়া এলাকার যতিন পাল জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা সবাই এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এটা তাদের জাত ব্যবসা হলেও এখন অনেকে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরেছেন। তিনি জানান, মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় এঁটেল মাটি এখন টাকা দিয়ে কিনে আনতে হয়। তাছাড়া মাটির তৈরি সামগ্রী পোড়ানোর জন্য জ্বালানির খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি। চাহিদা অনুযায়ী এখন শুধু মাটির তৈরি ফুলের টব, কলকি ও দইয়ের পাত্র তৈরি হচ্ছে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এতে সারাদিনের পরিশ্রম এবং কষ্টের টাকাও আসছে না। তিনি আরো জানান, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষের মেলায় তাদের সারা বছরের তুলনায় বিক্রি বেশি হয়। 

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রযুক্তিতে তৈরি সহজলভ্য প¬াস্টিক জাতীয় পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে মাটির তৈরি পণ্য বাজারে আর চলছে না। ব্যবহারে সহজ প¬াস্টিক ও এলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র ছাড়া মানুষ আগের যুগের মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন ব্যবহার করছে না মোটেও।

প্রবীণ কারিগর গুরুদাস পাল বলেন, আমাদের এই বর্তমান পুরুষের পরে হয়তো আর কেউ এই পেশায় থাকবে না। এক যুগ আগেও এই কুমার পাড়ায় শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। মৃৎশিল্প হারিয়ে যাওয়ার ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোতে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে। 

এক সময়ের অতি প্রয়োজনীয় মাটির বাসন-কোসন এখন আর গেরস্তের ঘরে খুঁজে পাওয়া যায় না। কালের বিবর্তনে এখন গ্রামাঞ্চলেও চলে এসেছে আধুনিক সব তৈজসপত্র। ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সানকি পাতিলের দেখা এখন মেলে না। কিছু হিন্দু পাল সম্প্রদায় এখনও তাদের বংশগত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কায়িক শ্রমের বিনিময়ে তারা যা পান তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনভাবে সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, সামাজিক অুনষ্ঠানসহ অর্থনৈতিকভাবে মোটেই স্বচ্ছল নয়। ফলে পৈত্রিক পেশায় নিয়োজিত কুমাররা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাই তারা সরকারের কাছে ক্ষুদ্র এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে এবং সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার দাবি জানান।

জানা গেছে, এ পেশার জিনিস তৈরির একমাত্র উপকরণ এঁটেল মাটির এখন বড়ই অভাব। ইটের ভাটার জন্য মাটি বিক্রি হওয়ায় এখন আর বিনামূল্যে মাটি পাওয়া যায় না। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মৃৎশিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা।

মাদারীপুরে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

মাদারীপুর: মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ও সদর উপজেলার মস্তফাপুর পালপাড়ায় তৈরি প্রাচীনতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না মৃৎশিল্পের নকশা করা নানান রকম বাহারী সামগ্রী। মৃৎশিল্পীরা কোন রকমে টিকিয়ে রেখেছেন পূর্ব পুরুষের এই ঐতিহ্য।

জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার খালিয়া এলাকা এক সময় মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ৭ পুরুষ আগে তারা এসেছিলেন যশোর থেকে। যশোরের হরিচরণ পাল আর গুরুচরণ পাল দু’জনে আড়িয়াল খাঁ নদে’র তীরবর্তী এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে শুরু করেছিলেন এই পেশা। কালের পরিক্রমায় মৃৎশিল্পের কদর কমে গেলেও এই কুমারপাড়ার কয়েকটি পরিবার নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। তারা কারুকার্য খচিত মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল, কলসি, কড়াই, সরা, মটকা, পেয়ালা, বাসন-কোসন, মাটির ব্যাংকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা রকমারী তৈজসপত্র তৈরি করছেন। 

স্থানীয়ভাবে মাটির সামগ্রী তৈরিকারী মৃৎশিল্পীদের বলা হয় কুমার। এককালে বিভিন্ন অঞ্চলে এ কুমার সম্প্রদায়দের নিয়ে গড়ে উঠেছিল কুমারপাড়া। কালের আবর্তনে কুমারপাড়া বিলীন হতে চলেছে। এখন টিকে থাকা দু-একজন কুমারও বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। মাটির সামগ্রীর চেয়ে টেকসই সামগ্রীর সহজলভ্যতার কারণে মৃৎশিল্পের চাহিদা নেই। তাই অনেকে ঐতিহ্যগত পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। 

জানা গেছে, যারা এখনো পৈত্রিক পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন তারা অতিকষ্টে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব দরিদ্র কুমার পরিবারগুলোর আর্থিক সংগতি না থাকায় তারা অধিক মাটি কিনে বেশি পরিমাণে জিনিস উৎপাদন করতে পারেন না। ফলে তারা খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না। এতে অর্থনৈতিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

খালিয়া এলাকার যতিন পাল জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা সবাই এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এটা তাদের জাত ব্যবসা হলেও এখন অনেকে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরেছেন। তিনি জানান, মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় এঁটেল মাটি এখন টাকা দিয়ে কিনে আনতে হয়। তাছাড়া মাটির তৈরি সামগ্রী পোড়ানোর জন্য জ্বালানির খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি। চাহিদা অনুযায়ী এখন শুধু মাটির তৈরি ফুলের টব, কলকি ও দইয়ের পাত্র তৈরি হচ্ছে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এতে সারাদিনের পরিশ্রম এবং কষ্টের টাকাও আসছে না। তিনি আরো জানান, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষের মেলায় তাদের সারা বছরের তুলনায় বিক্রি বেশি হয়। 

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রযুক্তিতে তৈরি সহজলভ্য প¬াস্টিক জাতীয় পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে মাটির তৈরি পণ্য বাজারে আর চলছে না। ব্যবহারে সহজ প¬াস্টিক ও এলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র ছাড়া মানুষ আগের যুগের মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন ব্যবহার করছে না মোটেও।

প্রবীণ কারিগর গুরুদাস পাল বলেন, আমাদের এই বর্তমান পুরুষের পরে হয়তো আর কেউ এই পেশায় থাকবে না। এক যুগ আগেও এই কুমার পাড়ায় শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। মৃৎশিল্প হারিয়ে যাওয়ার ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোতে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে। 

এক সময়ের অতি প্রয়োজনীয় মাটির বাসন-কোসন এখন আর গেরস্তের ঘরে খুঁজে পাওয়া যায় না। কালের বিবর্তনে এখন গ্রামাঞ্চলেও চলে এসেছে আধুনিক সব তৈজসপত্র। ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সানকি পাতিলের দেখা এখন মেলে না। কিছু হিন্দু পাল সম্প্রদায় এখনও তাদের বংশগত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কায়িক শ্রমের বিনিময়ে তারা যা পান তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনভাবে সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, সামাজিক অুনষ্ঠানসহ অর্থনৈতিকভাবে মোটেই স্বচ্ছল নয়। ফলে পৈত্রিক পেশায় নিয়োজিত কুমাররা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাই তারা সরকারের কাছে ক্ষুদ্র এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে এবং সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার দাবি জানান।

জানা গেছে, এ পেশার জিনিস তৈরির একমাত্র উপকরণ এঁটেল মাটির এখন বড়ই অভাব। ইটের ভাটার জন্য মাটি বিক্রি হওয়ায় এখন আর বিনামূল্যে মাটি পাওয়া যায় না। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মৃৎশিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা।

Wednesday, March 12, 2014

পিরোজপুরে টমেটো চাষ করে হুমায়ুন স্বাবলম্বী

পিরোজপুর: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার গাজীপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিন মাসে তিনি উপার্জন করেছেন আড়াই লাখ টাকা। আর এ টমেটো চাষে তিনি ব্যবহার করেছেন জৈব সার। পোকা মাকড় দমনে বিষ প্রয়োগ না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। দীর্ঘ দশ বছর ধরে কৃষি কাজ করে তার স্বচ্ছলতা না এলেও চলতি মৌসুমে শীতকালীন টমেটো চাষ করে তার আর্থিক দৈন্যতা ঘুচেছে।

হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, ভান্ডারিয়ার গাজীপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করে অভাব অনটনের সংসারে উপার্জনের জন্য কৃষি কাজ শুরু করতে হয় তাকে। আমন ও আউশ ধান চাষের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ধরণের শীত ও গ্রীষ্মকালীর শাক সবজীর চাষাবাদ করে সংসার চললেও অর্থ জমানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বরং ধার-দেনা করে তাকে চলতে হয়েছে। কিন্তু এবার টমেটো চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন ভান্ডারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের সহযোগিতায়। কারণ তার পরামর্শে এ বছর শীত মৌসুমে টমেটোর চাষ শুরু করেন হুমায়ুন। 

মাত্র দু’একর জমিতে সর্বমোট ৪৮ হাজার টাকা খরচ হয় টমেটো চাষে। এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার টমেটো ক্ষেতে রয়েছে তার। মৌসুমের শুরুতে প্রতিটন ৩০ হাজার টাকা করে বিক্রি হলেও পর্যায়ক্রমে দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার টাকায়। 

ভান্ডারিয়া বাজারের কাঁচা মালের পাইকারী ব্যবসায়ী মোঃ হায়দার আলী জানান, হুমায়ুন টমেটো চাষে কীটনাশক ব্যবহার করেননি এবং আমরাও এই টমেটো পাকাতে কোন রাসায়নিক প্রয়োগ করিনি বিধায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তথা ক্রেতা সাধারণের কাছে এই টমেটোর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। হুমায়ুনের সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক বিভিন্ন ধরণের চাষাবাদে ঝুঁকছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে টমেটো চাষ করে হুমায়ুন আজ স্বাবলম্বী। আমাদের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে ধান, গম, শাক-সবজী, ফল-ফলাদীর চাষাবাদ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।

Monday, March 10, 2014

স্ট্রবেরি চাষ করে আর্থিকভাবে সফল জিল্লুর রহমান

জয়পুরহাট: স্ট্রবেরি চাষ করে আর্থিকভাবে সফলতা পাওয়ায় জয়পুরহাটের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছেন এ জেলার প্রথম স্ট্রবেরী চাষ করে জিল্লুর রহমান। এলাকায় এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। মৃত্তিকা সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জয়পুরহাটের মাটি স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী এবং তা সুস্বাদু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

স্ট্রবেরি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও উচ্চমূল্যের একটি ফল। স্ট্রবেরি জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ফলিক এসিড, সেলোনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেলন, এলাজিক, ফেরালিক, এবং কুমারিক এ্যাসিড। এর মধ্যে এলাজিক এ্যাসিড ক্যান্সার, প্রৌঢ়ত্ব এমনকি এইডস প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করার প্রমাণ রয়েছে।  

জেলার জামালগঞ্জ এলাকার খেজুরতলী গ্রামের সফল স্ট্রবেরী চাষি জিল্লুর রহমান এবার ৭ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা, এ জমি থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার স্ট্রবেরী বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।  তার বড় ভাই সফল আঙুর চাষি ও রূপসী বাংলা হোটেলের প্রধান প্রকৌশলী রুহুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় ২০০৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ৩ বিঘা জমিতে রাবি-৩ জাতের স্ট্রবেরী  চাষ করেন। 

এতে আশানুরুপ ফলন না পাওয়ায় পরের বছর বড় ভাইয়ের সাহায্যে আমেরিকা থেকে কামারোসা ও ফেস্টিভাল নামক উন্নত জাতের স্ট্রবেরী চারা  সংগ্রহ করেন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের এ স্ট্রবেরী বেশ সুস্বাদু বলে জানান তিনি। তার স্ট্রবেরী বাগানে পরিচর্যার জন্য ৬ জন লোক সার্বক্ষণিক কাজ করেছে। রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও স্ট্রবেরী পুষ্ট ও মিষ্টির কারণে পাখির হাত থেকে রক্ষায়  নেট দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। প্রত্যেকটি গাছের গোড়াতে স্ট্রবেরী ঝলমল করতে দেখা যায়। এতে মন জুড়ে যায়।  

আগে ৫০ কেজি করে স্ট্রবেরী পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রতিদিন ৪শ’ কেজি থেকে সাড়ে ৪শ’ কেজি পর্যন্ত স্ট্রবেরী তোলা সম্ভব হচ্ছে। প্রথম দিকে প্রতি কেজি স্ট্রবেরী ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে স্ট্রবেরী তেমন বিক্রি হয় না ফলে প্যাকেট জাতের মাধ্যমে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মীনা বাজার, নন্দন সুপার মার্কেট এলাকায় পাঠাতে হয় বলে জিল্লুর রহমান জানান। 

অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক ফসল হওয়ায়  স্ট্রবেরী চাষ এ এলাকায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত তিন মাসের ফসল (জানুয়ারি-মার্চ)। জয়পুরহাট জেলার ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ স্ট্রবেরী চাষের উপযোগী বলে জানান, রাজশাহী বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী কামারুজ্জামান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী মন্ডল বলেন, স্ট্রবেরী চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

জামালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যানতত্ববিদ ইয়াছিন আলী বলেন, উচ্চমূল্যের ফসল স্ট্রবেরী চাষ করে এ জেলার কৃষকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক সাফল্য পেতে পারে। জিল্লুর রহমান স্ট্রবেরী চাষের পাশাপাশি এখন চারা বিক্রি করেও অনেক টাকা আয়  করছেন। প্রতিটি চারার মূল্য ১০ টাকা। স্ট্রবেরী চাষ করে তার আর্থিক সফলতা দেখে অনেকেই স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে এসেছেন। 

তার খেজুরতলী এলাকার চার বন্ধু আব্দুল হামিদ, ফারুক হোসেন বাবু, রবিউল ইসলাম ও আব্দুল ওয়াদুদ সরকার সাড়ে ১০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে এবার স্ট্রবেরী চাষ করছেন। যার নাম দিয়েছেন রেড গ্রিন স্ট্রবেরী ভিলেজ। স্ট্রবেরী চাষ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে ফলে কিছুটা ফলন কম পাওয়া যাবে। তবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার স্ট্রবেরী বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আব্দুল হামিদ । এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

এছাড়াও আব্দুল মোমিন আড়াই বিঘা জমিতে, আতাউল তিন বিঘা, ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহিম তিন বিঘা, কামরুজ্জামান এক বিঘা ও স্বপন ১৮ শতাংশ জমিতে এবার স্ট্রবেরী চাষ করছেন। 

এলাকা অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক সুশীল রায় বলেন, স্ট্রবেরী একটি বিদেশী ফল। কিন্তু দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে এর চাষ সারা বাংলাদেশের শুরু হবে। তবে জয়পুরহাটে যে ক’জন স্ট্রবেরী চাষ করছে, তারা প্রত্যেকই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই ধারণা করা যায় স্ট্রবেরি চাষ এখানে আরো বেশি হবে।

Sunday, March 9, 2014

মুন্সিগঞ্জে আলুভিত্তিক শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ

মুন্সিগঞ্জ: দেশে আলু উৎপাদনের সর্ববৃহৎ জেলা মুন্সিগঞ্জে এখন আলুর ভরা মৌসুম। রাস্তার দু’পাশে আলু আর আলু। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই বিস্তৃত জমিতে শুধুই আলু। কিন্তু দরপতনের কারণে এবং ক্রেতার অভাবে এই ভরা মৌসুমেও কৃষকরা জমি থেকে আলু খুব একটা তুলছেন না। 

অন্যান্য বছর এ সময়ে জমিতে আলু বেচা-কেনার হিড়িক পড়ে যেতো। কিন্তু এবার জমিতে ক্রেতা নেই। ফলে এলাকার চাষীরা তাদের কষ্টার্জিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জেলার টঙ্গিবাড়ি, লৌহজং, সিরাজদিখান ও সদর উপজেলায় আলুর জমি ঘুরে আলু চাষীদের হতাশাগ্রস্ত দেখা গেছে।

মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, আলুর দরপতনে মুন্সিগঞ্জের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। অনেক প্রান্তিক চাষী নিঃস্ব হয়ে যাবে। এসব পরিস্থিতি উল্লেখ করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে আলুর রপ্তানিসহ এর বহুমুখী ব্যবহারে প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, মুন্সিগঞ্জে আলু প্রসেসিং জোন করা এবং প্রান্তিক কৃষক যাতে আলুর ন্যায্য মূল্য পায় সে লক্ষ্যে এবং পটেটো-বেজ্ড শিল্প স্থাপন এবং পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজারজাতের জন্য নৌ এবং সড়ক পথ আরো উপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান জানান, মুন্সিগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু আবাদ হয়। তাই বাজারে চাহিদার তুলনায় আলু আমদানি বেশী হচ্ছে। তবে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হওয়া শুরু হলেই আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি মনে করেন, আলুর বহুমুখী ব্যবহার ও বিদেশে রফতানির পাশাপাশি কৃষকের লোকসান কমিয়ে আনতে আলুর চাষ কমাতে হবে। তিনি বলেন, আলুর পরিবর্তে পিঁয়াজ, রসুন, গম, সরিষা, ভুট্টা, তিল, কাউন চাষে কৃষকদের  উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই কৃষি বিভাগ কাজ শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকদের আলু আবাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে আনতে বিকল্প চাষাবাদ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যাচ্ছে না। এ ছাড়া তিনি কৃষকদের ঘরে বা মাচা করে স্থানীয় কৌশলে আলু সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন। 

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার ২০১ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মুন্সিগঞ্জের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয় ৩৭ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট ৬৪ হাজার ৯৪৬ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। অর্থাৎ মোট জমির ৫৮ দশমিক ১৫ শতাংশে আলু উৎপাদন হয়েছে। 
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৯২ হাজার ২০ টন হলেও ধারণা করা হচ্ছে ১২ লাখ টনেরও বেশী আলু উৎপাদন হবে। 

গত মৌসুমে ৩৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার ৭০৪ টন। এখানে কৃষকের আলু উৎপাদনে কেজি প্রতি খরচ পড়েছে ৭ টাকা থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে আলুর দর মাঠে কেজি প্রতি সাড়ে ৪ টাকা। আড়তে কেজি প্রতি ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৮ টাকা। জেলার ৭১টির মধ্যে সচল ৬৫টি হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। জেলার ৭৮ হাজার কৃষক আলু চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। আলুচাষীরা জানান, এখানে মানসম্মত হিমাগার আরো প্রয়োজন। বিশেষ করে বীজ সংরক্ষণের বিশেষ কোন হিমাগার এখানে নেই। 

বিএডিসি ডিলারদের জেলা সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, শিগগির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে আলুভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল মুন্সিগঞ্জ জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। 
জেলা আলু চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসোন জানান, বিঘা প্রতি অন্তত ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।

এ দিকে আলুর দরপতনে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়াদের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষকেরা। 
সদর উপজেলার সাতানিখিলের কৃষক আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, ফড়িয়ারা সিন্ডিকেট করে দাম আরো কমানোর চেষ্টা করছে। মাঠে এখন আলু বিক্রি করাই যাচ্ছে না। কোনভাবেই ক্রেতা মিলছে না। 

কিন্তু সদর উপজেলার কাটাখালীর কহিনূর হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম সাহা বলেছেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। এবারো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলুর আবাদ বেশী হয়েছে। লাগাতার হরতাল ও অবরোধে উত্তরাঞ্চলের অনেক আলু হিমাগার থেকে বের হতে পারেনি। বাজারজাত সংকটের কারণে অনেক জমির আগাম আলু জমি থেকে উঠাতে বিলম্ব করা হয়। এসব কারণে এক সাথে সব আলু বাজারে আসছে। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ আলু বাজারে আসায় এই দরপতন ঘটেছে। 

সদর উপজেলার নূরাইতলী গ্রামের ফড়িয়া বা আলু ক্রেতা মো. আব্দুল হালিম ও  মনির হোসেন ব্যাপারী জানান, তারা দাম কমানোর জন্য নয় চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশী হওয়ায় আলু কিনছেন না। 

জানা গেছে, অন্যান্য বছর ফড়িয়ারা যেখানে চাষীদের পেছনে পেছনে ছুটতেন এবার তাদের দেখাই মিলছে না। দাম কমানোর জন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমনটি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ কৃষক। 

কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, আলু উত্তোলনের জন্য শ্রমিক খরচ রয়েছে। কিন্তু দাম এতটাই পড়ে গেছে যে, আলু উত্তোলন করে এবং আড়তে নেয়ার পর যে দাম পাওয়া যাবে তাতে পোষাবে না।  

কৃষিবিদ কাজী হাবিবুর রহমান মনে করেন, দ্রুত আলুর বাজার স্থিতিশীল করার জন্য জরুরিভিত্তিতে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে আলু বিতরণ করা প্রয়োজন।

নড়াইলে মৌচাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে চাষীরা

 নড়াইল: মৌচাষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নড়াইলের চাষীরা। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে মৌচাষ শুরু করায় তাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরো বেশি লাভ করতে পারতো। সম্ভাবনাময় মৌচাষে সরকার একটু আন্তরিক হলেই কোটি টাকার মধু উৎপাদন হবে এমন ধারণা অনেকের। 

নড়াইলের মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে সরিষা, কলাই, গুজি, ধনিয়া, কালিজিরাসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য ফসলের। এসব ফসল এখন ফুলে ফুলে ভরা। তাই বসে নেই মৌচাষীরা। ফসলের ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স নিয়ে বসে পড়েছে। মৌমাছিরা গুন-গুন শব্দে ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করছে। আর এ মধু সংগ্রহের পর চাষীরা বাজারে বিক্রি করছে। জেলায় প্রায় তিনশ’ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে মৌচাষের মাধ্যমে।  

লোহাগড়া উপজেলার শামুখখোলা গ্রামের মৌচাষি জাহিদুর রহমান জানান, বছরের ৬ মাস এ পেশাটি ভালোভাবে চললেও ফুলের অভাবে ৬ মাস অলস সময় কাটাতে হয়। আর এ সময়ে মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত  হতে  হয়। নওয়াগ্রামের সালাম জানান, মধুর ন্যায্য মূল্য ও ঋণ সহযোগিতা পেলে এ জেলায় কোটি টাকার মধু বিক্রি করা সম্ভব হবে। 

নলদি গ্রামের জলিল জানান, ভালো এক কেজি মধু বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। প্রতি মৌসুমে একজন চাষীর দশ থেকে পনের লাখ টাকার মধু উৎপাদন করা সম্ভব।

সদর উপজেলার সিমানন্দপুর গ্রামের আছাদুজ্জামান জানান, ফসলের ক্ষেতে উৎপাদিত খাঁটি মধু পাওয়া যায় তাই এ মধুর চাহিদা রয়েছে অনেক। 

ফেদি গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, নির্ভেজাল মধু কিনে দেশের বাইরে এবং বিভিন্ন স্থানে কর্মরত স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নড়াইলের উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক ঢালী মৌচাষীদের প্রশিক্ষণ এবং ঋণ কার্যক্রমসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এ অর্থ বছরে মৌচাষীদের জন্য তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নেয়া হয়েছে। মৌচাষ লাভজনক পেশা হওয়ায় অনেকে এ পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান বিসিকের এই কর্মকর্তা।

Friday, March 7, 2014

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ফুল চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য ৫ কৃষকের

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রথমবারের মত গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন ৫ কৃষক। জানা যায়, চলতি বছর দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কদমশহর, বিজয়নগর, কাদিপুর ও আমানতপুর এলাকার ৫ জন কৃষক ১৫ শতক জমিতে প্রথমবারের মত বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করেছে। 

কদমশহরের কৃষক আখলাকুর রহমান বাবু উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে ফুল চাষের উপরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাকে বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুলের করম সরবরাহ করা হয়। এতে করে কৃষক আখলাকুর রহমান বাবুর ৪ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে গিয়ে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। ২২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করলে তার লাভ হয় ১৫ হাজার টাকা। 

তিনি বলেন, আগামী বছর গ্লাডিওলাস ফুল ছাড়াও অন্য জাতের ফুল চাষ করবে বেশি জমিতে। তাকে ফুল চাষে কারিগরিভাবে সহায়তা করেছেন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। 
উপজেলার বিজয়নগরের কৃষক শফিকুল ইসলাম (কালু) ৫ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করে তার ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এই কৃষক বলেন, ফুল চাষের উপর তার ধরণা থাকলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে ভাল ফলন পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় গত বছর মাত্র ১ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেন। কিন্তু তেমন লাভবান হয়নি। 

এই কৃষকের ফুল চাষের আগ্রহ দেখে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তাকে ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্লডিওলাস ফুলের করম সরবরাহ করে। ৫ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে তার খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত এই কৃষক ২৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছে। আরও ৩ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবে বলে তিনি জানান। 

উপজেলার আমানতপুরের কৃষক রবিউল ইসলাম ৩ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শনী আকারে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে ১৭ হাজার টাকার। প্রথম পর্যায়ে তেমন ফুল বিক্রি না হলেও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে জমির ৯০ ভাগ ফুল বিক্রি হয়ে যায় জমি থেকেই। এখনও আরও ২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবে বলে তিনি জানান। আগামী বছর ১ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে এই কৃষকের। 

উপজেলার কাদিপুরের কৃষক কাইউম আলী রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ধানী জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন। জমিতে সাদা ও গোলাপী রঙ মিশ্রিত গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যেক ফুলের স্টিক অন্যদের চেয়ে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছে। তিনি জানান, সাদা রঙের গ্লাডিওলাস ফুলের ১টি স্টিক পাইকারি দরে ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও সাদা ও গোলাপী রঙ মিশিয়ে পাইকারী দরে বিক্রি করেছে ১১ টাকা থেকে ১৪ টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছ থেকে গ্লাডিওলাস ফুলের করম সংগ্রহ করে ৪ শতক জমিতে চাষ করে। তার খরচ হয় ২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করেছে ১৭ হাজার টাকার। তার লাভ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তাই এই কৃষক আগামী বছর বেশি পরিমাণ জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করবে বলে জানান। 

উপজেলার কদমশহরের কৃষক আসাদুল হক ধান চাষ করে তেমন লাভবান হতে পারেননি। বিকল্প ফসল চাষ করার জন্য উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরে এলে তাকে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর ৩ শতক জমিতে প্রদর্শনী আকারে চাষ করে প্রথম বছর ১৬ হাজার টাকা লাভ করে খুবই খুশি এই ফুল চাষী। 
গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ফুলের বড় বাজার রয়েছে। 

ফুল ব্যবসায়ীরা যশোর ও বিদেশ থেকে ফুল আমদানি করে থাকেন। কিন্তু অল্প পরিমাণে হলেও চলতি বছরে গোদাগাড়ীর ফুল চাষিরা এসব বাজারে ফুল সরবরাহ করেছে। এ অঞ্চলের আগ্রহী কৃষকদের ফুল চাষের উপর বাস্তব ধারণা নেয়ার জন্য যশোরের ঝিকরগাছা এলাকায় ফুল চাষ প্রদর্শন করানো হয়েছে কয়েকজন কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের। প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুল চাষীদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হলে আগামী বছর ব্যাপকভাবে গোদাগাড়ীতে ফুল চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

Thursday, March 6, 2014

নওগাঁয় স্ট্রবেরী চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক উজ্জ্বল

নওগাঁ: নওগাঁয় স্ট্রবেরী চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন এক উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল। তাই সরকারি বা বেসরকারি চাকুরির প্রত্যাশা করেন না তিনি। স্ট্রবেরী আর সাথে অস্ট্রেলিয়ান আঙ্গুর চাষ করে তিনি জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে চান । 

সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল (৩৫) নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার সৈয়দ আলীর পুত্র। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করার পর চাকুরির প্রত্যাশায় ঘুরে ঘুরে কুল-কিনারা না পেয়ে অবশেষে স্বাবলম্বী অর্জনের লক্ষে বিভিন্ন জায়গা ও কাজ খুঁজে ফিরতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি কৃষি উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী অর্জনের পথ খুঁজে নেন। 

টেলিভিশনে এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে স্ট্রবেরী চাষে সফলতার খবর দেখে তিনিও এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরিকল্পনামতে তিনি শহরের জেলাখানা’র পশ্চিম পার্শ্বে ৩ বিঘা জমি লীজ নেন। বার্ষিক প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হন। সে জমিতে গত ২ বছর ধরে স্ট্রবেরী ও আঙ্গুর চাষ শুরু করছেন। গত বছরের সফলতা প্রাপ্তি’র ফলে এ বছরও তিনি ওই ৩ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করেছেন। 

অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চারা রোপন করেন। ১ ফেব্র“য়ারি থেকে স্ট্রবেরী উঠতে শুরু করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত উৎপাদন হবে। ঢাকা, চট্্রগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় তার বাগান থেকে স্ট্রবেরী সরবরাহ হচ্ছে। আবার সরাসরি ফসলের ক্ষেত থেকেও পাইকারী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার এই ক্ষেতের স্ট্রবেরীর চাহিদা রয়েছে- একথা জানান উজ্জ্বল। 

তিনি আশা করছেন এ বছর প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩ হাজার ২শ’ কেজি স্ট্রবেরী উৎপাদিত হবে। সেই হিসেবে ৩ বিঘায় উৎপাদিত হবে ৯ হাজার ৬শ’ কেজি। বর্তমান বাজার মুল্য অনুযায়ী তিনি পাইকারী বিক্রি করছেন প্রতি কেজি স্ট্রবেরী ২শ’ টাকা হারে। এ হিসেবে উৎপাদিত স্ট্রবেরীর বিক্রি মুল্য ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

জমির লীজ মুল্য, চারা, সার, ফসফেট, লেবার খরচ বাবদ প্রতি বিঘায় ১ লাখ হিসেবে মোট উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র স্ট্রবেরী উৎপাদন করে এ বছর তার নীট মুনাফার পরিমাণ কমপক্ষে ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়াও আঙ্গুরের মওসুম থেকেও তিনি আয় করবেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ। 

স্ট্রবেরী চাষ করে কেবল তিনি নিজেই লাভবান হয়েছেন তাই নয়। অন্যদেরও স্ট্রবেরী চাষে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পরামর্শে গাজীপুর, গাইবান্ধা, খুলনা, নাটোর, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২২টি স্ট্রবেরী বাগান তৈরি করে দিয়েছেন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল উজ্জ্বলের স্ট্রবেরী ক্ষেত সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে নওগাঁ জেলায় বিভিন্ন এলাকায় স্ট্রবেরী চাষ শুরু হয়েছে এবং যারা চাষ করেছেন তারা লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে স্ট্রবেরী চাষ খুবই লাভজনক বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।