Sunday, February 16, 2014

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়ের এখনো অনেক চাহিদা

মানিকগঞ্জ: যে গুড় দিয়ে একসময় অফিসের বস, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ এবং নিকট আত্মীয়দের খুশি করা হতো সেই ঐতিহ্যবাহী ঝিটকার হাজারী গুড় দীর্ঘ সময়কাল পেরিয়ে আজো তার অবস্থান ধরে রেখেছে। 

যদিও ভোজন রসিকরা এর মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন তবুও স্বাদে গন্ধে ঝিটকার হাজারী গুড় এখনও সারা বাংলায় তুলনাবিহীন এবং এর চাহিদা অনেক। 

প্রায় ১৫০ বছর আগের হাজারী গুড়ের সুনাম আজো টিকিয়ে রেখেছে এদেশের একমাত্র উৎপাদনকারী মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী পরিবারসহ শতাধিক গাছী পরিবার। মানিকগঞ্জের দুটি দ্রব্যের সুনাম এক সময় এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে দুটি দ্রব্য হচ্ছে তিল্লির দই ও অপরটি ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। এই গুড়ের সুনাম এক সময় এদেশ থেকে এশিয়া, ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীকেও এই গুড় উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। 

বৃহত্তর ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা গুলোতে শুধু খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। এসব খেজুর গাছের দ্ইু-তৃতীয়াংশই রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। সেখানে প্রতি একরে ১৫ টি খেজুর গাছ দেখা যায়। হরিরামপুরের ঝিটকায় খেজুর গুড় শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। গুণে মানে, স্বাদে গন্ধে এই গুড়ের বিস্তর সুনাম রয়েছে। 

মানিকগঞ্জে শীত মৌসুমে খেজুর গাছের অনেকটা গুরুত্ব বেড়ে যায়। খেজুরের রস-গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছি, কুমার, কামার, জ্বালানী ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্র্াক মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আরতদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সংয্ক্তু হয়। এই গুড় প্রথম আবিস্কার করেন মিনহাজউদ্দিন হাজারী। তার নামেই এই গুড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজারী গুড়’। এ গুড়ের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দু’হাতে গুড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মত উড়ে যায়। 

দাদার আমল থেকে গুড় উৎপাদন করে আসা গাছী আজমত আলি হাজারী (৬৫) জানান, বেশি শীত অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই গুড় উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য সময়। আগের দিন বিকেলে গাছ কেটে হাড়ি বেঁধে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে (সূর্য উঠার আগে) রস সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে ছেঁকে মাটির তৈরী (জালা) পাত্রে চুলায় (বাইনে) জ্বালিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী করা হয় হাজারী গুড়। এই পদ্ধতি এখন আর হাজারী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক গাছির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুড় দেখতে যেমনি সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। মিষ্টি ও টল টলে রস ছাড়া হাজারী গুড় হয় না। প্রতিকেজি গুড় ৬শ’ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, বাজারে এক ধরনের হাজারী সদৃশ্য গুড় পাওয়া গেলেও মৌলিক ভাবে তার ব্যবধান রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু গুড় তৈরীকারক সাদা রং-এর গুড়ের উপর নাম খোদাই করে বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে থাকে। হাজারী পরিবার এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নকল গুড় প্রস্তুতকারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে ট্রেড মার্ক ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মানিকগঞ্জের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস গুড় প্রায় বিলীন হতে চলেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার গাছ কেটে ইট ভাটায় লাকরি হিসেবে পুড়িয়ে এই গুড় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই শিল্পকে রক্ষা করা দরকার। 

Sunday, February 9, 2014

ঠাকুরগাঁওয়ে বায়োগ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে

ঠাকুরগাঁও: বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই তার উৎপাদনের পদ্ধতিও হচ্ছে ভিন্ন। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এর উৎপাদন হচ্ছে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। যেমন- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি মুরগির খামারে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ ছাড়াও জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে খামারের বিভিন্ন কাজে। শুধু তাই নয়, খামারের দু’পাশের দুটি পাড়াতে বায়োগ্যাস সরবরাহ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বঠিনা গ্রামে ১০ একর জমির উপর স্থাপিত ‘নিশান্তপুর পোল্ট্রি এ্যান্ড ফিডস লিমিটেড’ নামে একটি আধুনিক মুরগির খামার রয়েছে। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এই খামারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে এখানে উৎপাদন হচ্ছে বায়োগ্যাস। ১০ হাজার ৭৫০ ঘনফুট আয়তন বিশিষ্ট রয়েছে দু’টি বায়োগ্যাস প্লান্ট।

মুরগির খামার ও বায়োগ্যাস প¬্যান্টের উদ্যোক্তা জনার্দন চক্রবর্তী ও শিবলী ইসলাম জানান, আপাতত ১০ কিলোওয়াট (১০,০০০ ওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বায়োগ্যাস দিয়ে চালানো হচ্ছে মুরগির খামারের ৬টি ব্র“ডার, খামারের শ্রমিকদের ৪টি শেডে চলছে ৩ বেলা রান্নার কাজ। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই মুরগির খামারে কাজ করছে অর্ধশত শ্রমিক।

উদ্যোক্তারা আরো জানান, প্রতিদিন এখানে ৩০ হাজার ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার পাইকাররা এসে ডিম নিয়ে যায়। এখানে পৃথকভাবে স্থাপিত ফিড মিলে উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন আড়াই টন করে মুরগির খাবার। তাছাড়া ৮টি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের মাছ। প্রতি মাসে এক টন করে মাছ ছাড়াও উৎপাদন হচ্ছে ১৬০০ কেজি করে মাছের পোনা।

তারা আরো জানান, শিগগির দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস সংযোগ দেবেন। এই গ্যাসের সাহায্যে গ্রামবাসী রান্নাবান্নার কাজ করতে পারবেন, জ্বালাতে পারবেন বাতি। সরকারের বিদ্যুতের উপর গ্রামবাসীর নির্ভরতা কমবে।

ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ও সদর ইউএনও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা এ প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নিলে বর্তমান সরকার তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবে। কেননা, এ ধরনের উদ্যোগে দেশের ডিমের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আবাসিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

Thursday, February 6, 2014

সৌরবিদ্যুতে চলছে সেচযন্ত্র

যশোর : যশোরের গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে অনায়াসে। এ বিদ্যুতে চলছে দশ হর্সপাওয়ার শক্তিসম্পন্ন বড় আকারের পাম্পও। এই পাম্পে সারাবছর নিরবচ্ছিন্নভাবে সেচ সুবিধা দেওয়া যায় ৫০ থেকে ১০০ বিঘা জমিতে।

এতদিন ধারণা ছিল, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়িতে একটি-দুটি বাতি জ্বালানো বা পাখা চালানো সম্ভব। কিন্তু পরিস্থিতি যে বদলে গেছে তার প্রমাণ যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামে আর্স বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া প্রকল্পে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচযন্ত্র চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, যশোরে এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। এর আগে ২০০৯ সালে ঢাকার অদূরে একটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলট) এই প্রকল্প চালু হয়। পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ায় পর্যায়ক্রমে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চৌগাছার সাঞ্চাডাঙ্গায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ায় চলতি মৌসুমে ওই গ্রামের কয়েক হাজার চাষী তাদের ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজেদের ফসলের মাঠ এনেছেন সৌরবিদ্যুতের আওতায়।

আর্স বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামে সাতটি সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে। প্রতিটি প্যানেল স্থাপনে গড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা। সরকারি সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লি. (ইডকল) এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইলেকট্রো সোলার পাওয়ার লি. ও রহিম আফরোজ রিনিউএবল অ্যানার্জি লি.।

আর্স বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. শামছুল আলম জানান, সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পাওয়ায় গ্রামের কৃষকদের বিঘাপ্রতি সেচ খরচ বছরে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কমবে। সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ এবং বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা ডিজেলের ওপর নির্ভরশীলতাও হ্রাস পাবে। পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় কৃষকরা সৌরবিদ্যুতের সুবিধা নিতে দ্রুত এগিয়ে এসেছে।

ইলেকট্রো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান জানান, এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মাটির গভীরে স্থাপন করা হয়েছে পাম্পগুলো। কিন্তু ভূস্তরের ওপর থেকে ম্যানুয়ালি অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রতিটি পাম্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দিনে ১৩ দশমিক ২৬ কিলোওয়াট। পানি উত্তোলন ক্ষমতা দিনে গড়ে সাড়ে সাত লাখ লিটার, যা দিয়ে ৫০ থেকে ১০০ বিঘা জমিতে সেচসুবিধা দেওয়া সম্ভব। আপৎকালীন সময়ে (মেঘলা আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে) যাতে কৃষকের জমির ফসল পানির অভাবে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য সোলার প্যানেলগুলোতে প্যারালালভাবে স্থাপন করা হয়েছে ডিজেলচালিত শ্যালোও। এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মুশফিকুর জানান, ভূগর্ভ ছাড়াও ইচ্ছা করলে এই পাম্পের মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানিও ফসলের ক্ষেতে সরবরাহ করা যাবে, যা হবে আরও পরিবেশ অনুকূল।উদ্যোক্তারা বলছেন, সাঞ্চাডাঙ্গার মাঠে বছরে দুটি করে ফসল উৎপন্ন হয়। এখন মাঠটি সৌরবিদ্যুতের আওতায় আসায় চাষীরা ইচ্ছা করলে বছরে তিনটি ফসলও উৎপন্ন করতে পারবেন। ফলে উৎপাদন বেড়ে যাবে অনেক।

কথা হয় সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক জোনাব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে তিনি এ যাবৎ চাষাবাদ করে এসেছেন। শ্যালোমেশিন মালিকের কাছ থেকে সেচ সুবিধা নিতে তাকে বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে দিতে হয়। এবার তার জমি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় আসায় খরচ কমবে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে এক হাজার টাকা।

একই গ্রামের চাষী কওসার আলী বলেন, ‘শুনিছি সৌরবিদ্যুতে খরচ অনেক কম। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা করে নিয়া হবে। খরচ আরেকটু কমলি ভালো হতো।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আর্স বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামছুল আলম বলেন, বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। উদ্যোক্তা ও কৃষকদের সমঝোতার ভিত্তিতে টাকার অঙ্ক চূড়ান্ত হবে। সেক্ষেত্রে খরচ আরও কমতে পারে।

সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিদর্শন করতে মঙ্গলবার যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান চৌগাছার সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এই প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হওয়ায় সাঞ্চাডাঙ্গার চাষীদের ফসল উৎপাদন খরচ কমে আসবে। ফলে তারা লাভবান হবে। তিনি বলেন, যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় আগামী তিন বছরের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ ধরনের ৫০টি পাম্প স্থাপন করা হবে। যত দ্রুত এ ধরনের প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া যাবে, আর্থিক ও পরিবেশগতভাবে তত বেশি আমরা লাভবান হবো।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক সময়ে চাষীদের যাতে পানি পেতে সমস্যা না হয় এবং অন্যান্য জটিলতা দূর করতে প্রথম থেকেই তৎপর তারা। প্রতিটি পাম্পের আওতাধীন কৃষকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের পানি ব্যবস্থাপনা ও সেচমূল্য আদায় তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঠিক নিয়মে সেচের পানি ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুবিধাভোগীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাওয়ায় সাঞ্চাডাঙ্গার অধিকাংশ কৃষক খুশি হলেও কারো কারো কিছু সমালোচনাও আছে। সাঞ্চাডাঙ্গার মাঠে কৃষকদের মালিকানাধীন ডিজেলচালিত কয়েকশত শ্যালোমেশিন রয়েছে। এসব মেশিন এখন কৃষকরা কী করবেন তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এ ছাড়া পাশের মাঠে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যে কৃষকরা সেচসুবিধা নিচ্ছেন, তাদের চেয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের বেশি টাকা গুনতে হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আর্স বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেন, সেচ মৌসুমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কৃষকরা দিনের খুবই অল্পসময় বিদ্যুৎ সুবিধা পায়। ফলে অনেক কৃষকের ধানই পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎচালিত এই প্লান্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা চালু থাকবে। ফলে পানির অভাবে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে না কখনও।

পাশের কমলাপুর, খড়িঞ্চা প্রভৃতি গ্রামের কৃষকরা দলে দলে যাচ্ছেন সাঞ্চাডাঙ্গার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে। তাদের আশা, আশপাশের গ্রামগুলোও দ্রুত এ ধরনের প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

Tuesday, February 4, 2014

সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে মৌমাছি দিয়ে মধু আহরণ

শেরপুর: শেরপুরের গ্রামের পথে পা বাড়ালেই নজরে পড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার ক্ষেত। ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। অনুকূল আবহাওয়া, দাম ভালো থাকায় জেলায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষার এ আবাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভিন্নতাও। মৌমাছি দিয়ে সরিষার ফুল থেকে আহরণ করা হচ্ছে মধু। কৃষকরা বলছেন, এ মধু আহরণের জন্য তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা প্রদান করলে, তারাও সরিষার চাষের পাশাপাশি মধু আহরণ করে আরও লাভবান হতে পারবে। 

সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শেরপুরের সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকদের কৃষি ফসল উৎপাদনের ভিন্নতাও এসেছে। যেসব ফসলে সেচ কম লাগে এবং বাজারে দাম ভালো সেসব ফসল উৎপাদনে কৃষক ঝুঁকছেন। 

সরিষা ক্ষেতে সেচ কম লাগায় এবং সরিষার বাজার মূল্য ভালো থাকায় দিনে দিনে জেলায় সরিষার আবাদ বাড়ছে। গ্রামের পথে পা বাড়ালেই দেখা মিলছে হলদে-সরিষা ফুলের সমাহার। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে ফুলের চাদরে ক্ষেতগুলোকে ঢেকে দিয়েছে। কাছে গেলে দেখা যায়, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষীরা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মৌমাছি দিয়ে আহরণ করছে মধু। 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছিদের গায়ে লাগা ফুলের পুংকেশর ফল উৎপাদনের পূর্বশর্ত পরাগায়নে সাহায্য করছে। এ যেন সরিষা ফুল ও মৌমাছির অপূর্ব সম্পর্ক। এর ফলে বেড়ে যায় সরিষার ফলনও। 

কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে আমন ধান উঠার পর বোরো লাগানোর আগ পর্যন্ত জমিগুলো ফাঁকা থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক আগে থেকেই জমিগুলো সরিষা চাষের উপযোগী হয়। 

একদিকে অনুকূল আবহাওয়া ও কম খরচ, অন্যদিকে বাজার মূল্য ভালো এবং বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে কৃষক এবার বেশিরভাগ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নকলা উপজেলার কৃষব শাহজাদা স্বপন এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তার মতো নকলার চন্দ্রকোণা গ্রামের আমজাদ হোসেন, নেপাল চৌহানসহ অনেক সরিষা চাষীরা বলেন, সরিষা আবাদ আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝের সময় হয়। 

সেচ কম লাগে, দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি গরুর ভালো খাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সরিষা চাষের ব্যাপারে নকলা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর সরিষা চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া থাকায় ব্যাপক জমিতে চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে সেচ কম লাগে। বাজারে দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি পশুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সঙ্গে সরিষা ফুল থেকে পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মধু। 

এ বছর গাজীপুরের মীক মৌ খামার নামে একজন ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষী চন্দ্রকোণা গ্রামে মধু আহরণ করছেন। এ ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষী নূরুল ইসলাম রিপন জানান, বিসিক থেকে মাত্র ৭ দিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এ মৌ-চাষ শুরু করেছিলেন। মাত্র ৪/৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই ভাল আয় করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

চন্দ্রকোনা এলাকায় ১২৪টি মৌবাক্স স্থাপন করে গড়ে প্রতিবাক্স থেকে সপ্তাহে দুইবার প্রায় ২/৩ কেজি করে মধু আহরণ করা হয়। প্রতিকেজি মধু বিক্রী হয় গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষ করে এলাকার কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি বেকারদেরও কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলে তিনি জানান। স্থানীয় কৃষকরাও তার মধু আহরণ দেখে, নিজেরাই মধু আহরণে উৎসাহী হয়েছেন। তারা চাইছেন প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা। আর এটা হলে তারাও বাড়তি আয় করে লাভবান হতে পারবেন বলে তারা জানান।

Sunday, February 2, 2014

লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প কেনাফ চাষ

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কেনাফ চাষের উপযোগিতা শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। তিন বছরব্যাপী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় বিগত ২০১৩ সালে। গবেষণা প্রকল্পের স্থান নির্ধারিত হয় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, ফুলতলা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। 

গবেষণায় দেখা যায়, কেনাফ, পাটের বিকল্প শস্য হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে চাষ উপযোগী। পাটের আঁশের চেয়ে কেনাফ আঁশের গুণগত মান কিছুটা কম হলেও ফলন বেশি, চাষাবাদের খরচ কম, অত্যন্ত লবণ ও খরা সহিষ্ণু। যেখানে লবণাক্ততার জন্য পাট চাষ সম্ভব নয়, সেখানে অনায়াসেই কেনাফ চাষ সম্ভব।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ও গাছবৃদ্ধির সময় কেনাফ ১৮ থেকে ২০ ফংস-১ লবণ সহ্য করতে পারে। তবে অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি হলে ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি জমে থাকে এমন মাটিতে কেনাফ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গবেষণাগারে সফলভাবে কেনাফ খড়ি এবং আঁশ থেকে কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরি করা হয়। কাগজের গুণগতমান পরীক্ষা করা হয় ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। 

পরীক্ষায় কেনাফ থেকে তৈরি কাগজ উঁচু মানের প্রতীয়মান হয়। কেনাফ বীজ থেকে তেল আহরিত হয়। বীজে তেলের পরিমাণ ৭ শতাংশ পাওয়া যায়, তবে উন্নতমানের তেল আহরণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত তেল পাওয়া সম্ভব। কেনাফ তেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন গবেষক দাবি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও মূখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ গবেষণা এখনো চলছে এবং ভবিষ্যতে আরো নিবিড়ভাবে এর গবেষণা করা হবে। বর্তমানে বিনা চাষে কেনাফ চাষের উপযোগীতা দেখা হচ্ছে এবং কেনাফ তেলের ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণাবলী দেখার প্রয়াস চলছে।

মনিরুল বলেন, খুলনা ও বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় আমন ধানই প্রধান ফসল। মধ্যবর্তী সময়ে হাজার হাজার একর জমি ফসল চাষ ছাড়াই পতিত থাকে। খুলনায় কিছু কিছু এলাকায় তিল চাষ হলেও বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা বা খরার ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাটের প্রায় সমমান ও পাটের চেয়ে আরও বহুমুখী কাজে ব্যবহারযোগ্য কেনাফ চাষ এ অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

তিনি জানান, কেনাফ দিয়ে নিউজপ্রিন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি চালু করা সম্ভব। সুন্দরবনের গেওয়া গাছের ওপর নির্ভর হতে হবে না। কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে পারে। বিদেশে কেনাফের আঁশের বিপুল চাহিদা রয়েছে। 
প্রাইভেট কার তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ইনটেরিয়র ইনসুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জুটেক্স তৈরিও সম্ভব। তেলে রয়েছে মেডিসিন্যাল ভ্যালু। ইতোমধ্যে বিদেশে ইঁদুরের উপর এই তেল নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ভারত, চীন থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং রাশিয়ায় এর বিস্তৃতি ঘটছে।

কেনাফ চাষের এই গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের প্রফেসর ড. মো. সারোয়ার জাহান এবং উপদেষ্টা সিনিয়র প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। 

খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত ও খরা প্রবণ এলাকায় বাড়তি ফসল হিসেবে কৃষকরা কেনাফ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কেননা এর মাধ্যমে নিউজ প্রিন্ট মিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যাবে। 

পাশাপাশি হার্ডবোর্ড মিলের কাঁচামাল, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, তেল উৎপাদনসহ বিভিন্ন ইন্টেরিয়র কাজের ইনস্যুলেটর হিসেবে কেনাফ ব্যবহার করা যাবে। আর অফ সিজনে পতিত জমিতে কেনাফ চাষ করতে পারলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, শ্রমশক্তি ব্যবহার এবং সর্বোপরি পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে। 

Saturday, February 1, 2014

মেহেরপুরে ভেড়া পালন করে ভাগ্য বদল

মেহেরপুর: ব্লাক-বেঙ্গল গোটের পাশাপাশি মেহেরপুর জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালন করা হচ্ছে। বেকারত্ব দূরীকরণের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভেড়া পালন। জেলার প্রত্যন্ত জনপদের বেকার যুবক থেকে শুরু করে অনেক নারী-পুরুষ এখন ভেড়া পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। 
ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া পালন মেহেরপুর জেলার জনগণের গরীবের গাভী পালন বলেও খ্যাতি আছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালন করছে। স্বল্প পূঁজি, স্বল্প জায়গা ও কম খাদ্য হলেই ভেড়া পালন করা সম্ভব। কম খরচের কারণে দিন দিন ভেড়া পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ভেড়া পালনকারী ইসহাক আলী জানান, ভেড়া পালনে এলাকার লোকজনের অর্থনীতির চাকা যেমন ঘুরছে, তেমনি বেকারত্বের অভিশাপ থেকেও যুবকরা মুক্তি পাচ্ছে।

একই গ্রামের ভেড়া পালনকারী হান্নান আলী জানান, লেখাপড়া শিখেছি। এখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিতে খারাপ লাগে। তাই ৩টি ভেড়া থেকে দুই বছরে ৪১টি ভেড়ায় দাঁড়িয়েছে। ভেড়ার বাচ্চা বিক্রি করেই আমার হাত খরচ হয়ে যায়। আমার মতো অনেকেই বাড়িতে বসে দু’একটা ভেড়া পালন করছে। আবার অনেকেই খামার গড়ে তুলে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

মুজিবনগর উপজেলার ভেড়া খামারী ভবের পাড়ার রাসেল আহমেদ বলেন, অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ও স্বল্প স্থানে অনায়াসে এ প্রাণী পালন সম্ভব। আমার খামারে এখন ৩৫টি ভেড়া রয়েছে। যার দাম প্রায় ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মাংস সুস্বাদু ও চামড়ার দাম ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এটি বাজারজাত করতেও কোনো সমস্যা হয় না। কারণ ফড়িয়ারা এসে গ্রাম থেকে ভেড়া কিনে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ভেড়ার দাম প্রায় ছাগলের মতো। কেজি প্রতি মাংস বিক্রি হয় ৪০০ টাকা করে। বছরে দুইবার ৩/৪টি করে বাচ্চা দেয় ভেড়া।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক কুমার মন্ডল জানান, ভেড়া পালনে আগ্রহীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। অনেকে ভেড়া পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় ৭৭টি ভেড়ার খামার আছে। এছাড়া খামার করে এবং পারিবারিকভাবে দু’ একটি করে পালন করা হচ্ছে, এতে জেলায় প্রায় ৪২ হাজার ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে।

Thursday, January 30, 2014

মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল রসুন চাষ বাড়ছে

মাগুরা: মাগুরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ। গত বছর প্রায় ১০০ একর জমিতে এ জাতের রসুন চাষ হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের সহায়তায় চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি প্রর্দশনী ক্ষেতসহ প্রায় ১৫০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুনের চাষ হয়েছে। 

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৫০০ হেক্টর, শালিখায় ৬০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬ হাজার ২৫৯ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী ক্ষেত করার পাশাপাশি গত বছরের উৎপাদিত বীজ দিয়ে চলতি মৌসুমে জেলায় কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুন চাষ শুরু হয়েছে। 

তাদের দেয়া তথ্য মতে, বারি-২ রসুন সাধারণ জাতের রসুনের তুনলনায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। যেখানে সাধারণ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ টন। সেখানে বারি-২ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ টন। রসুন মুলত শীতকালীন ফসল। শীত যত বেশি পড়ে এর ফলনও তত ভালো হয়। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ রসুন লাগানোর উপযুক্ত সময়। উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন উঠতে সময় লাগে ১৪০ দিন। স্থানীয় যাতে সময় লাগে ১৫০ দিন। 
বর্তমানে আমাদের দেশে রসুনের চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার টন। সেখানে উপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন। বাকি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। রসুনের এই ঘাটতি মোকাবেলা করতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বারি-২ জাতের রসুন চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। 

বারি-২ রসুন স্বাদে ভালো, দেখতে দেশী রসুনের চেয়ে আকর্ষণীয় এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। একারণে বারি-২ জাতের রসুন চাষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অধুনিক চাষ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দিচ্ছেন তারা। 

মাগুরা সদর উপজেলার সাচনী গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন ও আঠারখাদা গ্রামের নাজমুল বিশ্বাস কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৪০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুনের প্রদর্শনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে উভয় কৃষক প্রায় ৩০ মণ ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। 

মাগুরা আঞ্চলিক সমলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, দেশে রসুনের ঘাটতি মেটাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ জাতের রসুন উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি একটি উচ্চ মূল্যের অর্থকারি ফসল। যার রয়েছে অনেক ভেজষ ঔষধিগুণ। বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে রসুনের ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে এই জাতের রসুনের চাষ কৃষকরা শুরু করেছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় জেলায় রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি। 

Sunday, January 26, 2014

হস্তজাত শিল্পের মাধ্যমে বরিশালের অবহেলিত নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় হস্তজাত শিল্পে দরিদ্রদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজের ভূমিহীন অবহেলিত দুঃস্থ ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করছে বেসরকারী এনজিও এমসিসি। 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজকে শক্ত হাতে হাল ধরাতে পেরেছে তারা। অপরের উপর নির্ভর না করে নিজের সামর্থ্যরে মাধ্যমে জীবন পরিচালনাসহ কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নারীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে উপজেলাটি এমসিসির ৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে সহাস্র্র্রাধিক দুঃস্থ, অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে।

প্রকল্পগুলো হলো, বিবর্তন, কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট্স, বাগধা এন্টারপ্রাইজ, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ। মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) ১৯৮১ সালে উপজেলা সদরে এর কার্যক্রম শুরু করে। 

এ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯৮৪ সালে ৩ লক্ষাধিক টাকার মূলধন নিয়ে ৫৫ শতাংশ জমির উপর গড়ে উঠে জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ। এ প্রকল্পে উপকরণ ডোবা, মজাপুকুর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাগজ তৈরি করে সেই কাগজ দিয়ে পুতুলবক্স খেলনা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। এসব সামগ্রী বিদেশে রফতানি করা হয়। কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট ১৯৮৭ সালে এমসিসি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয় প্রকল্পটি। 

এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তালপাতা, মুলিবাঁশ, কেয়াপাতা ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০টির বেশি শিল্প সামগ্রী তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু হয় বিবর্তনের। শুরু থেকেই কচুরিপানা প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে বাগধা এন্টারপ্রাইজ ২৫ শতাংশ জমির উপর স্থায়ীভাবে প্রকল্পের কাজ চালু হয়। প্রতিষ্ঠানের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে শন, সুতা, পাট দিয়ে সুতলির ব্যাগ, পার্টস, সাইড ব্যাগসহ ২৭১টি সৌখিন দ্রব্য সামগ্রী তৈরি হয়। 

২০০৪ সাল থেকে এমসিসি’র সাথে অংশীদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ডের চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় কাঁচামাল ঘাস, বাঁশ, বেত, নারিকেল পাতার শলা, শনপাট, কলাগাছের বাকল, ইত্যাদি দ্বারা বিভিন্ন হস্তজাত মালামাল তৈরি করে আসছে। উৎপাদিত মালামাল বাজারজাতকরণ দেশী-বৈদেশিক বাজার বৃদ্ধি, নতুন নতুন স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে নতুন হস্তজাত পণ্য তৈরী সহ প্রকল্পের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এমসিসি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন (সিএফ)-র সাথে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। 

এসব প্রকল্পের বাইরে কোন উপকরণ বিক্রি করা হয় না। কোনো প্রকল্পের উপকরণ দরকার হলে ৫টি প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পগুলো একটি অপরটির পরিপূরক। এসব হস্তজাত শিল্পের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বিদেশে। রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, জাপান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসহ ১০টি দেশে রফতানি হয়। 

এসব প্রকল্প থেকে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ প্রকল্পে ১ জন মহিলা ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করছেন। এছাড়াও প্রতি বছর তাদের প্রকল্পর অনুকূলে কাজের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। এতে একদিকে যেমন তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি অন্যদিকে দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। 

Saturday, January 25, 2014

গবাদি পশু পালন করে নজর কেরেছে জয়পুরহাটের লাভলি

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের অসহায় লাভলি বেগম বিআরডিবি’র ঋণ সহায়তায় গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সংসারে খরচের জন্য তাকে আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না। 

লাভলি বেগম জানান, স্বামী পানু মিয়ার দর্জির কাজের সামান্য রোজগারে দু’ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো। টাকার অভাবে ছেলে লেমন হোসেনকে বেশি লেখাপড়া করাতে না পারলেও বর্তমানে ছোট মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ৮ম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিআরডিবি’র পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি বসত বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করেন তিনি। গরুর দুধ বিক্রির টাকায় মেয়ের পড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না লাভলি বেগমের। এক বছর আগে ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ৪০ হাজার টাকা। 

এতে আয় বর্ধনমূলক নানা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন লাভলি বেগম। তাকে দেখে ওই এলাকার অসহায়, দুঃস্থ ও বেকার মহিলারা তাদের সংসার এখন আয় বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লাভলি বর্তমানে অন্যান্য অসহায় নারীদের কাছে অনুকরণীয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-এর আওতায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের অসহায় দুঃস্থ মহিলারা পল্লী প্রগতি  প্রকল্পের সদস্য হয়ে সেখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন, বসত বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি চাষ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

উপজেলার কৃষ্ণনগর বৈরাগীপাড়া ও ফকিরপাড়া গ্রামে গিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআরডিবি থেকে ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পালন করে বদলে গেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই ছেলেমেয়েদের প্রথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখা পড়া করাতে পারেননি। নেমে পড়তে হয়েছে জীবিকার সন্ধানে। স্বল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামের কঠিন তাগিদে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে। 

সমাজে সব মহিলারাই স্বপ্ন দেখে সৎ উপার্জনে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বড় হওয়ার। আর এই বড় হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খোঁজ মেলে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া কৃষ্ণনগর ও বৈরাগীপাড়া গ্রামের অসহায়-দুঃস্থ মহিলা ফাহিমা, শাহানাজ, রোফেজা, হাফিজা, মেহেরননেছা, কুলছুম, বেবী, আঞ্জুয়ারা সহ আরো অনেকেই এ কর্মসূচির সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন করে পুরুষের পাশাপাশি নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। 

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষেতলাল উপজেলা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষেতলাল উপজেলায় প্রায় ৪শ’ পরিবারের মাঝে ৭০ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে। 

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মনজুর জানান, দারিদ্র বিমোচন লক্ষ্যে অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারসমূহকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করে। এ প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যেই সমাজের দুঃস্থ মহিলারা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আয় বর্ধনমূলক কাজ করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে। 

Thursday, January 23, 2014

হবিগঞ্জের শুটকি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটবাসীর অত্যন্ত প্রিয় খাবার হল শুটকি মাছ। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটি শুটকির আইটেম না থাকলে কেমন জানি খাবার অসম্পুর্ণ থেকে যায়। কয়েকদিন খাবার তালিকায় এই আইটেমটি না থাকলে তারা রীতিমত হাঁফিয়ে উঠেন। তখন রুচির পরিবর্তনের জন্য হলেও চাই শুটকির তরকারী। তবে তাদের কাছে বেশী পছন্দ হলো হাওড়ের দেশী বা মিঠা পানির মাছের শুটকি। সিলেটবাসী পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন না কেন তাদের এই শুটকি চাই-ই চাই।

দেশীয় মাছের এই শুটকির ব্যাপক চাহিদায় হবিগঞ্জের হাওড় অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শুটকি শিল্প। শুটকি উৎপাদন করে হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরিবার স্বচ্ছলতা পেয়েছে। আর শুটকি বিপননের সাথে জড়িত থেকে আরও কয়েক হাজার মানুষ জীবিকা অর্জন করছেন। এই শুটকি মাছ দেশের সীমানা ছেড়ে ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে নিয়মিত। অনেকেই ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রতিদিনই শত শত কেজি শুটকি বিদেশে পাঠাচ্ছেন। দেশ থেকে প্রবাসে যাওয়ার সময় প্রায় সকলের লাগেজই থাকে এই শুটকি মাছ।

বর্ষা শেষে হেমন্তের শুরুতেই যখন কমতে থাকে তখন হাওড় ও বিলের আহরিত মাছ দিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানকার শুটকিতে কোন কেমিক্যাল মেশানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে হাওড়ে মাচান তৈরি করে এই শুটকি উৎপাদন করা হয়। এই শিল্পের সাথে জড়িত অধিকাংশরাই হলেন মহিলা। পুরুষ লোকজন মাছ আহরনের কাজে জড়িত থাকলেও প্রক্রিয়া করণের সাথে জড়িত থাকেন মহিলারা। ফর্মালিনমুক্ত এখানকার শুটকি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ছাড়াও ইউরোপ,আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ও বিল বেষ্ঠিত এলাকা। এখানকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়সহ স্থানীয় বাসিন্দারা হাওর-বিল থেকে মাছ ক্রয় করে এনে শুটকি উৎপাদন করেন। এই দুই উপজেলায় প্রায় ২ হাজার পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুটকি উৎপাদনের মৌসুম হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ প্রথমে পরিস্কার করে কাটা হয়। পরে লবণ মেখে তা ডাঙ্গায় মাচান তৈরি করে শুকানো হয়। এই কাজে শুটকি উৎপাদনকারী পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের কর্মহীন পুরুষ, কিশোরী ও মহিলা শ্রমিকরা কাজ করে। এ পেশায় জড়িত ও সংশি¬ষ্টরা স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করছেন। আর অনেকেই এ ব্যবসা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন। 

হবিগঞ্জের শুটকি দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এর কদর রয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার বাঘহাতা, গাজীপুর, শান্তিপুর, ভাটিপাড়া, সুনারু, নাগুরা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাও, নোয়াগড়, বিরাট, কোদালিয়া, বদলপুর রয়েছে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণের রয়েছে অসংখ্য ডাঙ্গা। ডাঙ্গায় দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ি, কাকিয়া, শইল, গজার, টাকি, বাইম, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি তৈরি করা হয়। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিরাট গ্রামর শুটকি উৎপাদনকারী মোবারক মিয়া জানান, প্রতিকেজি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং বড় মাছের শুটকি ১ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। শুটকি ব্যবসায়ী আজমান আলী জানান, শুটকির মৌসুম ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে শুটকি রাখার মত কোন গুদাম নেই। সরকারি ভাবে কোন গুদামের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই শুটকি সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জে হাওড়ের মিঠা পানির মাছের শুটকি ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে আসা সামুদ্রিক মাছের শুটকিও বিক্রি হয়। তবে সামুদ্রিক মাছের চেয়ে মিঠা পানির শুটকির চাহিদাই বেশী। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, হবিগঞ্জের শুটকির বহু সুনাম রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ-এর কদর রয়েছে। তিনি জানান, কৃষি অফিস থেকে শুটকি উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন সময়ে টেকনিক্যাল সার্পোট দিয়ে থাকি। তবে সরকারিভাবে যদি কোন ধরণের সুযোগ দেয়ার সুবিধা থাকে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। 

বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সবিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, হাওড়ে যখন মাছ আহরণের মৌসুম শুরু হয় তখন মাছের দাম অনেক কমে যায়। তখন সেই মাছ বিক্রি না করে শুটকি করা হয়। এর মাধ্যমে তার এলাকায় শত শত লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাইর থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে শুটকি নিয়ে যান।

বানিয়াচঙ্গ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল খান জানান, হাওড়ের মাধ্যমে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারাই এই শুটকি শিল্পের সাথে জড়িত। এটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। তবে লোকজন যদি ব্যাপক হারে পোনা মাছ নিধন না করতো তাহলে আরও বেশী পরিমাণ শুটকি উৎপাদন করা যেত। 

এখন হবিগঞ্জে শুটকির ভরা মৌসুম। হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচঙ্গে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশেই দেখা যাবে শুটকি তৈরির কাজ করছেন অনেক পুরুষ আর মহিলা। যদি সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা পাওয়া যায় তাহলে শুটকির বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে শুটকি উৎপাদনকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।