Friday, March 25, 2016

কোনাবাড়ি থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় কেয়া কসমেটিকস

।।এম এম মাসুদ।।
ভিশন এবং মিশন থাকলে যে কেউ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। যার বাস্তব উদাহরণ আবদুল খালেক পাঠান। বাল্যকাল থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ভিশন ছিল তার। এখন তিনি কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দিয়েই যে প্রতিষ্ঠানটি বেশি পরিচিত। ঢাকার গাজীপুরের কোনবাড়িতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। এই কোনাবাড়ি থেকেই উদ্যম, নিষ্ঠা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে। এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান কেয়া গ্রুপ। কেয়া গ্রুপ গত কয়েক বছরে এর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডজনের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক টার্নওভার ও প্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা। কেয়া গ্রুপের দাবি, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে গ্রুপটি। এ গ্রুপে কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা দিচ্ছে শত কোটি টাকা। প্রসাধনী, পোশাক, এগ্রো ও পরিবহন খাতের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রুপটি। এসবের পাশাপাশি গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।

তরুণদের হাতে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড

আকিজ, আবুল খায়ের, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ-আরফএফএল, এপেক্স ও নাভানা গ্রুপ 

: বলা হয়ে থাকে ‘পরিকল্পনা’ কাজের অর্ধেক। আর একথাটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযজ্য। ব্যবসার ক্ষেত্রে এ শব্দটি আরও বেশি প্রয়োজন। শুরুতেই যাদের পরিকল্পনা ছিল ব্যবসাকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। তাদের সেই চিন্তা-চেতনা ঠিক রেখে যোগ্য উত্তরাধিকারীর হাত ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে থাকে পারিবারিক ব্যবসা। দূরদর্শী নতুন প্রজন্মের হাতে সেটা আরও বিকশিত হয়। দেশের শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। এসব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা না ফেরার দেশে চলে গেলেও থেমে নেই ব্যবসায়িক অগ্রগতি। দ্বিতীয় প্রজন্মের হাত ধরে আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে এসব শিল্প গ্রুপ। 

আকিজ গ্রুপ: 
দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। ২০০৬ সালে মারা যান এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন। গ্রুপের দুই ডজন প্রতিষ্ঠান ভাগ করে দিয়ে যান ১০ ছেলের মধ্যে। আকিজ গ্রুপ এখন দুই ভাগে ভাগ হলেও গত ১০ বছরে এর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন ডজনের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক টার্নওভার ও প্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা। ২০০৬ সালে আকিজ গ্রুপে ৪০ হাজার জনবল থাকলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি।

আকিজ গ্রুপের দাবি, ৪০ বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে গ্রুপটি। এ গ্রুপে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। গ্রুপটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা দিচ্ছে বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। পাট, বেভারেজ ও টোব্যাকো খাতের নেতৃত্বে রয়েছে আকিজ গ্রুপ। দেশের সবচেয়ে বড় জুট মিলটিও এখন তাদের। বেভারেজের পাশাপাশি গ্রুপের ঢাকা টোব্যাকোও এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। আকিজ ফ্লাওয়ার মিলস, আকিজ শিপিং লাইন, পারফেক্ট টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড এর অন্যতম। এ সাফল্যের পেছনে বাবার রেখে যাওয়া নীতিকেই বড় করে দেখছেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা তারা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। বাবার শেখানো নিয়ম-নীতি মেনে তারা ব্যবসা করছেন। চেষ্টা করে যাচ্ছেন একে আরও বিকশিত করার। তিনি বলেন, আকিজ গ্রুপের পরিবেশক, কর্মী বাহিনী, ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক ব্যবসায়িক নীতিতে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার একটা বড় প্রভাব রয়েছে। তার বাবার অনুপস্থিতিতেও সবকিছু তার মতো করেই চলছে।

আবুল খায়ের গ্রুপ: ১৯৫৩ সালে বিড়ি ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের হাত ধরে আবুল খায়ের গ্রুপের যাত্রা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় আবুল বিড়ি কোম্পানি থেকেই এই গ্রুপের ব্যবসা শুরু। ১৯৭৮ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের মারা যান। এর পর একে একে গ্রুপে যোগ হয়েছে এক ডজনের বেশি মাঝারি ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আবুল খায়েরের উত্তরসূরিরা গড়ে তুলেছেন স্টিল মিল, সিমেন্ট কারখানা, চা বাগান, ডেইরি প্রডাক্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গ্রুপ স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে দুগ্ধ খাতে নাম লেখায়। এর পর ১৯৯৬ সালে যোগ হয় স্টারশিপ ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার। ১৯৯৭ সালে আসে মার্কস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার। আর সিলন চা নিয়ে বাজারে আসে ২০০৪ সালে। দেশের সিমেন্ট খাতের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণে সক্ষম আবুল খায়েরের প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গরু মার্কা ঢেউটিন দিয়ে ইস্পাত শিল্পে নাম লেখায়। অতিসম্প্রতি তারা বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে একেএস টিএমটি ৫০০ডব্লি¬উ ইস্পাতের রড উৎপাদনে।

স্কয়ার গ্রুপ: স্কয়ারের শুরুটা ১৯৫৮ সালে। তিন বন্ধু মিলে কারখানা স্থাপন করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। ২০১২ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রয়াত হলেও প্রতিষ্ঠান চলছে আপন গতিতে। গত চার বছরেও সঙ্কটে পড়েনি গ্রুপটি। গ্রুপের সব পণ্যের সুনাম অক্ষুণœ রয়েছে। গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন স্যামসন এইচ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র স্যামুয়েল এস চৌধুরী। 
বাবার অবর্তমানেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন সন্তানরা। স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবদ্দশায় ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গ্রুপের মূল প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭.৫১ শতাংশ। পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৮৮ শতাংশে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফার প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে। ২০১৪ সালে পুরো ফার্মাসিউটিক্যালস খাত যেখানে ১১.৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, সেখানে স্কয়ার ফার্মার প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫.৩৬ শতাংশ। স্কয়ার ফার্মার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফর্মুলেশন ছাড়াও স্কয়ার টেক্সটাইলস, স্কয়ার ফ্যাশনস ও স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড নামে তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে গ্রুপটির। এর বাইরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, মাছরাঙা টেলিভিশনসহ ২৪টি সিস্টার কনসার্নও রয়েছে। অংশীদারিত্ব রয়েছে ব্যাংক ও বীমা ব্যবসায়। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অধীন মসলা ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত করা হয় রাঁধুনী, রুচি ও চাষী ব্র্যান্ডের মাধ্যমে। বর্তমানে সংশ্লি¬ষ্ট খাতে এটি মার্কেট লিডার হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। এ ছাড়া স্কয়ার টয়লেট্রিজের অধীন বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। এরই মধ্যে স্কয়ার হাসপাতাল দেশের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালেও বিনিয়োগ রয়েছে স্কয়ার ফার্মার।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরী। ১৯৩৯ সালের ১০ নভেম্বর নাটোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছিলেন সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা। সেখান থেকে অবসর নিয়ে শুরু করলেন দেশ নিয়ে কাজ। দেশে বেকারত্ব কমাতে হবে, দেশের পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এই ছিল ভাবনা। রংপুরে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) পথচলা শুরু। দেশে তখন বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে পানির জন্য। সেসময় আমজাদ খান রংপুরে টিউবওয়েল তৈরির কারখানা হিসেবে আরএফএল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি। যা বর্তমানে প্রাণ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। এ গ্রুপের উৎপাদন তালিকায় রয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পণ্য। বদনা থেকে শুরু করে নলকূপ সামগ্রী, প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে ফ্যান, চিপস-কোমল পানীয় থেকে শুরু করে হলুদ-মরিচের গুঁড়া। ১৯৯৬ সালে ফ্রান্সে ‘প্রাণ’ পণ্য প্রেরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১২৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্রাণ গ্রুপের পণ্য। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারের বেশি। গ্রুপের রয়েছে ২৫টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আমজাদ খান চৌধুরীর চার সন্তান। তারা হলেন- আজার খান চৌধুরী, ডা. সেরা হক, আহসান খান চৌধুরী ও উজমা চৌধুরী। তাদের মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আহসান খান চৌধুরী এবং উজমা চৌধুরী গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সহধর্মিণী সাবিহা আমজাদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। আহসান খান চৌধুরী জানান, আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাদ্য সরবরাহ করা। এ লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, বাবার দুটি স্বপ্ন ছিল। এর একটি নাটোরে একটি হাসপাতাল করা। আরেকটি দেশের ডেইরি শিল্পের উন্নয়ন। এ স্বপ্ন সফল হয়েছে। 

নাভানা গ্রুপ: বাংলাদেশের একসময়কার সবচেয়ে বৃহত শিল্প গ্রুপ ছিল ইসলাম গ্রুপ। ১৯৬৪ সাল থেকে জহুরুল ইসলামের দক্ষ হাতে এটি গড়ে ওঠে। তার ইন্তেকালের পর ইসলাম গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান হন শফিউল ইসলাম কামাল। দায়িত্বে এসেই প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেন ‘নাভানা গ্রুপ’। তাদের একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- নাভানা লিমিটেড, নাভানা ব্যাটারিস লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, নাভানা কন্সট্রাকশন লিমিটেড, নাভানা টেক্সটাইল লিমিটেড, নাভানা ইন্টারলিঙ্ক লিমিটেড, বিপণন লিমিটেড, নাভানা ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, নাভানা কম্পিউটার অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, নাভানা সফটওয়্যার লিমিটেড, নাভানা ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড, নাভানা ট্যাক্সিক্যাব কোম্পানি লিমিটেড, নাভানা সিএনজি লিমিটেড, নাভানা রিনিউএবল এনার্জি লিমিটেড, নাভানা লজিস্টিক্স লিমিটেড, নাভানা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, নাভানা ফার্নিচার লিমিটেড ইত্যাদি। শফিউল ইসলাম কামাল ১৯৬৮ সালে ইসলাম গ্রুপে যোগ দেন। বর্তমানে নাভানা গ্রুপ শুধু ইসলাম গ্রুপের খ্যাতি ধরেই রাখেনি বরং আধুনিক উদ্ভাবনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সু-দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে আরো উন্নত, বিখ্যাত ও প্রভাবশালী। 

এপেক্স গ্রুপ: ১৯৭৫ সালে অ্যাপেক্স ট্যানারির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা জীবন শুরু করেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। ইতালিতে চামড়া রপ্তানির মধ্য দিয়ে অ্যাপেক্স ট্যানারির যাত্রা। বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে অ্যাপেক্সের জুতা বিক্রি হয়। গড়ে তুলেছেন এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অ্যাপেক্স ট্যানারি, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, এপেক্স ফার্মা, ব্লু ওশান ফুটওয়্যার, অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট, অ্যাপেক্স অ্যাডভারটাইজিংসহ আরো প্রতিষ্ঠান। দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি। বর্তমনে অ্যাপেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে হাল ধরেছেন ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। অন্যদিকে ‘ঢাকা মেট্রপলিটন’ চেম্বারের এ যাবতকালের সবচেয়ে তরুণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এখন লক্ষ্য অ্যাপেক্স চামড়া দিয়ে কম দামে সব ধরনের জুতা প্রস্তুত করা।  এমনকি চপ্পল থেকে শুরু করে সব বয়সীর ক্রেতাদের জন্য নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে অনা। 

এসব কোম্পানি ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষ ব্র্যান্ড যাদের প্রতিষ্ঠাতারা এখন মারা যাননি। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েরা কোম্পানির সঙ্গে দ্বিতীয় প্রজন্মের হয়ে যুক্ত হয়েছেন এখনই। অর্থাৎ আগামীতে তারাই কোম্পানির মূলে থেকে হাল ধরবেন বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নিটল-নিলয়, ওয়ালটন, রানার, যমুনা ও মেঘনা, পারটেক্স, এসিআই, নাসা, হোসাপ, এস আলম, ওরিয়ন, ইউনিক ও এনভয় গ্রুপ। 

Sunday, July 6, 2014

বীরগঞ্জের বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটি মানুষের আশার সঞ্চার করেছে।  কেননা, এটি বদলে দিতে পারে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। 

জানা গেছে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর পাল্টাপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ্ব ডা. সমসের আলীর পুত্র মীম সীড-এর স্বত্ত্বাধিকারী কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল বীরগঞ্জ পৌর শহরের দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের মাকড়াই মৌজায় ১১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার নির্মাণ করেছেন। কাহারোল উপজেলা স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রকৌশলী দিলীপ কুমার সরকারের তত্ত্বাবধানে ক্যাটালিস্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় সুদূর ভারত থেকে প্রযুক্তি ভিডিও চিত্রধারণ করে হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়। হিমাগারটি পরীক্ষামূলক চালুর পর কাঁচা সবজি ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে আলুসহ সকল প্রকার কাঁচামাল হিমায়িত করে রাখার ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখবে। হিমাগারটি নির্মাণে সর্বসাকুর্ল্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। 

কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল জানান, আলু, সবজি ও বিভিন্ন ফলসহ যে কোন কাঁচামাল প্রাকৃতিকভাবে হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে ১১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করলেও তেমনভাবে সফলতা লাভ করেনি। তবে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এ ধরনের বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার নির্মাণ করে সফলতা অর্জন করেছে। 

সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ১১০ থেকে ২০০ টন পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করা সম্ভব। প্রতি মৌসুমের মার্চ মাস থেকে কৃষকেরা এখানে একাধারে ৬ মাস পর্যন্ত আলুসহ বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারবেন। হিমাগারে পরীক্ষামূলক ২৮ দিন পর্যন্ত ফুলকপি ও ৭৫ দিন পর্যন্ত পাতা কপি সংরক্ষণ করে সফল হয়েছে। হিমাগারটির ঠান্ডা রাখতে তলদেশে ৪ ফিট গভীরতার মধ্যে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ পানির মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব। হিমাগারটির তলদেশের পানি ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হয়। বিদ্যুৎচালিত হিমাগারের বিকল্প হিসেবে এই বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি আমাদের  গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। 

স্থানীয় কৃষক এবং আলু চাষী মো. হবিবর রহমান, আব্বাস আলী, শফিকুল ইসলাম, পুরেন চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন কৃষক জানান, ইতোপূর্বে হিমাগারের আলু সংরক্ষণের জন্য কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা দিতে হতো। কোনো কারণে আলু পঁচে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় যেতো না। অথচ প্রাকৃতিক হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যয় হয় কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। এখানে আলুসহ সকল প্রকার সবজি পচে যাওয়ার আশংকা থাকে না। 

তাই বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটিকে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক। কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুলের এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, তিনি এই হিমাগারটি গত এপ্রিল মাসে পরিদর্শন করেছেন। নতুন উদ্ভাবনায় বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক রূপরেখায় হিমাগারটি নির্মিত করা হয়েছে। এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষকের কাঁচা তৈরি তরকারি মাসব্যাপী সংরক্ষণ করা যাবে। তিনি এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় হিমাগার স্থাপনকারী তৈহিদুল ইসলামকে সাধুবাদ জানান।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে এই উপজেলা গঠিত হয়েছে। উপজেলার ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রতি বছরই সব ধরনের সবজি এবং আলুর উৎপাদন হয়। সবজি ও আলু সংরক্ষণে হিমাগার নির্মাণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

কৃষিবিদ তোহিদুল ইসলামের হিমাগারটি নির্মাণের পর সফলতা আসায় এ ধরনের হিমাগার আরো ৪টি নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Thursday, June 26, 2014

তথ্য ও ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে

মাগুরা: বর্তমান সরকারের সময়ে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বল্প সময়ে হয়রানি মুক্তভাবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে যশোর জেলার পর দ্বিতীয় জেলা হিসেবে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে চালু হয়। এরপর দেশের অন্যান্য জেলাতে এ কার্যক্রম চালু হয়। এর সেবা পেয়ে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। দেখা যায়, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নাগারিক সেবা পেতে ২ তিন সপ্তাহের জায়গায় এখন মাত্র ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগছে। 

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দুর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত সেবা দানের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে (এ্যকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প) পরবর্তিতে সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর কাজ শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে জেলার ৩৬ ইউনিয়েনে চালু হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সেবা কেন্দ্রে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এসব প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা পরিচালকদের বেকারত্ব দূর হবার পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সেবা দানের মাধ্যমে তারা ভালো আয় করছে। পরবর্তীতে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে চালু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে দেশব্যাপী ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রর উদ্যোক্তা পরিচালকরা ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে ই-মেল প্রদান, অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধন, আউটসোর্সিং কাজ, ফটোকপি এবং লেমিনেটিং, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদানকরার পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সেবা ছাড়াও কম্পোজ, ছবি তোলা, প্রিন্ট ও স্ক্যানিং এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখানো ও প্রজেক্টর ভাড়া, এছাড়া জীবন বীমা কর্পোরেশন ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ ও মাকেন্টাইল ব্যাংকের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দ্রুত গ্রামীণ মানুষের অর্থ আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছেন। এর ফলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি হয়রানিমুক্ত ভাবে সেবা পাচ্ছেন তারা। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে শালিখার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ও শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের রুপালী খাতুন এ বছর শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পরিচালকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। জেলা প্রশাসন তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে স্কিনটাস ট্রাব দিয়েছেন। যা দিয়ে তারা ফোনে কথা বলাসহ ইন্টারনেট ব্যবহারে কাজে লাগাতে পারছেন। 

শালিখা উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা রামপুর গ্রামের তাপস কুমার অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন সংগ্রহ করেন। কাঠালবাড়িয়া গ্রামের শান্ত বিশ্বাস অন লাইনে পাসপোর্টের আবেদন ও বিউটি রানী পোদ্দার অনলাইনে ছেলের জন্ম নিবন্ধন করান। তারা জানান, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সহজভাবে স্বল্প সময়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই খুব দ্রুত তারা সেবা গ্রহণ করতে পেরেছেন। এটি চালু হওয়ায় তারা অনেক সহজে সেবা পেয়েছেন। তাদের মত গ্রামের অনেক মানুষ প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন। 

অন্যদিকে মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জনসাধারণ ই-সেবা কেন্দ্র থেকে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। জমির পর্চার নকল তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন করতে পারছেন। এ ছাড়া আবেদনকারী দাখিলকৃত আবেদনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানতে পারছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর জমির পর্চার নকলের জন্য মানুষকে এখন আর রেকর্ড রুমে যেতে হয় না। ই-সেবা কেন্দ্র থেকে এখন জমির পরচার নকলের আবেদন দাখিল ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা গ্রহণ করতে পারছেন।

জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জরুরিভিত্তিতে জমির এস, এ এবং আর, এস পর্চার নকলের জন্য মাত্র ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং জমির সি, এস পর্চার জন্য মাত্র ২৪ টাকা কোর্ট ফি দিতে হচ্ছে। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে ১৯ জুন-২০১৪ পর্যন্ত জমির পর্চার নকল নেয়ার জন্য ৯০ হাজার ৬’শ ৪৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৯ হাজার ২’শ ৪৭ টি আবদেন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। 

মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবা কেন্দ্রে আগত মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার ওমেদপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন- জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে অতি কম খরচে কম সময়ের মধ্যে জমির পর্চার নকল হাতে পেয়েছি। হয়রানি মুক্তভাবে নির্ধারিত সময় জমির পর্চার নকল পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। 

জেলা প্রশাসক মাসুদ আহমদ বলেন, জনগণের দোর গোড়াই সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ও জেলা প্রশসাকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে সেবা প্রদান করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। 

Wednesday, June 25, 2014

রাজধানীর যোগাযোগে পরিবর্তন এনেছে হাতিরঝিল

ঢাকা: প্রায় সাত বছর পর কানাডা প্রবাসী মহিবুল হাসান সপরিবারে দেশে ফিরেছেন। উঠেছেন রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বড় বোনের বাসায়। সেদিন সন্ধ্যার পরেই কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলেন মহিবুল। ভাগ্নে মবিন তাদেরকে নিয়ে এলো মামার অদেখা নতুন এক জায়গায়। মহিবুল তো অবাক- ‘ঢাকায় তাহলে এমন চমৎকার জায়গাও আছে!’

হাতিরঝিলে লেকের ওপর ব্রীজে দাঁড়িয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন মহিবুল হাসান। প্রবাসে থাকলেও দেশের সব খবরাখবরই রাখেন তিনি। হাতিরঝিলের কথাও শুনে আসছিলেন। কিন্তু এখানে এসে এমন চমৎকার পরিবেশ দেখতে পাবেন ততটা ভাবেননি তিনি।

‘কেমন লাগছে হাতিরঝিল?’- এমন প্রশ্নে মহিবুল বললেন, ‘এক কথায় চমৎকার! আমার দেশে এমন মনোমুগ্ধকর জায়গা তৈরি হয়েছে, তা ভাবতেও ভাল লাগছে।’ তাঁর সঙ্গে আসা ভাগ্নে মবিন বললো, ‘এখন যারা ঢাকায় বেড়াতে আসেন, তাদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে এই হাতিরঝিল।’

রাজধানী ঢাকার অন্যতম আকর্ষণীয় ও বিনোদনের স্থান এখন হাতিরঝিল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণা আর আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠে বিশাল হাতিরঝিল এলাকা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আলোয় ঝলমল এই এলাকায় ভিড় জমে উঠে বেশি। এ সময় ব্রীজ, ভিউয়িং ডেক, ঘাট, সীট বেঞ্চ ইত্যাদি প্রায় সবই জমজমাট হয়ে উঠে। সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ও লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় দর্শনার্থীরা।

কিন্তু হাতিরঝিলকে কেবল দৃষ্টিনন্দন বা বিনোদনের স্থান হিসেবে গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। ‘বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আরেফুর রহমান জানালেন, মোট চারটি উদ্দেশ্য নিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঝিলের চারদিকে সড়ক নির্মাণ করা। তিনি জানান, প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হাতিরঝিল দেখতে তো খুব ভালই লাগছে। তিনি তখন বিনোদন ও সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে হাতিরঝিলকে সাজাতে নির্দেশ দেন।

এখন বিনোদনের স্থান হিসেবে হাতিরঝিল যতটা পরিচিতি পেয়েছে, ততটা বাইরের অনেকেই জানে না যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রাপ্তির কথা। তবে এ পথে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা তুলে ধরেন তাদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হওয়ার কথা।

ধানমণ্ডির বাসিন্দা আতিকুজ্জামান। তাকে নিয়মিত রামপুরায় যেতে হয়। তিনি প্রাইভেট কারে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আগে অনেক ঘুরে যেতে হতো। যানজটেও পড়তে হতো। এখন দুঃসহ যানজট থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন হাতিরঝিল দিয়ে যাতায়াত করি। এতে সময় সাশ্রয় হয়েছে কমপক্ষে আধাঘণ্টা। আর আমার মত অনেকেই যারা আগের রাস্তায় চলাফেরা করতেন তারাও এখন এ পথ ব্যবহার করেন। ফলে মূল রাস্তায় কিছুটা হলেও যানজট কমেছে।’

মহাখালী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজিজুর রহমানকে প্রায়ই মতিঝিল ও পুরনো ঢাকায় যেতে হয়। তিনি জানান, আগে গুলিস্তান পর্যন্ত যেতে অনেক সময় লাগতো। সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা সহজে যেতেও চাইতো না। এখন সিএনজি অটোরিকশায় হাতিরঝিল দিয়ে রামপুরা হয়ে কম সময়েই যাতায়াত করা যায়।

বাড্ডা এলাকার গৃহিনী পারুল বেগম। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় তার আত্মীয়-স্বজন আছে। আগে যাতায়াতের কথা চিন্তা করে ওই এলাকায় প্রায় বেড়ানোই বাদ দিয়েছিলেন। হাতিরঝিল হওয়ার পর ওই এলাকায় বেড়াতে বা কোন মার্কেটে গেলে এখন আর অতোটা চিন্তা করেন না। হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে তারা সেখানে চলে যান।

রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত ও যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নগরীর পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। পূর্ব-পশ্চিমে সরাসরি কোন সড়কপথ নেই। তাই পূর্ব-পশ্চিম দিকের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। এতে নগরবাসীর যাতায়াতে বিশেষ করে- ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, বনানী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার ইত্যাদি এলাকার মানুষের অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। তবে প্রকল্পের সামান্য কাজ এখনো বাকি রয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে এ-পথে যাতায়াতে আরো সুফল পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের জুলাইয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. আরেফুর রহমান জানান, হাতিরঝিলে আর সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রামপুরা ও বাড্ডার দিকে দুটি ইউ লুপ নির্মাণ করা। তিনি জানান, এখন হাতিরঝিলে গাড়ি ঢুকতে একটু সমস্যা হচ্ছে। ইউ লুপ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে রামপুরা ও বাড্ডা এলাকা থেকে সহজেই হাতিরঝিলে গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে পারবে। ভূমি থেকে ৩০ ফুটের মতো উপর দিয়ে ইউ লুপের মাধ্যমে শুধুমাত্র গাড়ি চলাচল করবে। এতে হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি জনসাধারণের জন্য হাতিরঝিল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বাস্তবায়ন করছে এই প্রকল্প। সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও ঢাকা ওয়াসা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের প্রায় ৩০৩ একর এলাকায় ফুটপাত রয়েছে ৮.৮০ কিলোমিটার পথ। যান চলাচলের পথ আছে ৮ কিলোমিটার। এ রাস্তায় মানুষজন নির্বিঘেœ যাতায়াত ও চলাফেরা করতে পারছে। এখানে রিকশা, বাস ও ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। ফলে এ রাস্তায় কোন যানজট নেই, নেই কোন দুর্ঘটনা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখনো এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সহায়তা করছেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে।

অনেকের ধারণা, হাতিরঝিল প্রকল্পের দুর্বল দিক হচ্ছে- রাস্তার চওড়া কম, ফুটপাতও বেশি বড় নয়। ফলে গাড়ির যাতায়াত ও দর্শনার্থীদের চলাফেরায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, জায়গার অভাবে রাস্তা ও ফুটপাত ততটা বড় করা যায়নি। তবে ইউ লুপ চালু হলে প্রকল্প এলাকায় গাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়া সহজ হবে।

Tuesday, June 24, 2014

জয়পুরহাটে নার্সারী ব্যবসায় দৃষ্টান্ত রেখেছেন জহুরুল

জয়পুরহাট: বৃক্ষ মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে পিতার কাছ থেকে জুটেছিল ২ টাকা। ১ টাকায় যাতায়াত ও ১ টাকায় বাদাম খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পুরো টাকায় বাদাম খাওয়ার ইচ্ছায় পায়ে হেঁটে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে জয়পুরহাটে বৃক্ষ মেলায় এসেছিলেন জহুরুল ইসলাম। মেলায় বিভিন্ন প্রকারের গাছের চারা দেখে স্কুল পড়–য়া কিশোরের জহুরুলের মনের মধ্যে আগ্রহ জন্মে। কিন্তু কি করা পকেটে টাকা নাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মেলার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে এক স্টল মালিক ডেকে চারা নিতে বললে জহুরুল জানায়, তার কাছে টাকা নাই। প্রতি উত্তরে স্টল মালিক বলেন, ৪/৫ টাকাও নাই। জহুরুল ২ টাকা আছে জানালে এর বিনিময়ে স্টল মালিক তাকে একটি লিচুর চারা দেন। খুশিতে আত্মহারা জহুরুল বাড়িতে ফিরে এসে চারা রোপণ করেন। এটা ১৯৭৪ সালের কথা। 

ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালবাসা। স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চারা কিনে বাড়ির পাশ দিয়ে তা রোপন করে। এভাবেই নার্সারীর প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় জহুরুলের। স্কুল জীবনে ভাল কাবাডি খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে জয়পুরহাট চিনিকলে মৌসুমী যান চালকের চাকরি হয়। এরপর ২০০৬ সালে পিতার কাছ থেকে পাওয়া ১০ কাঠা জমিতে নার্সারীর কাজ শুরু করেন। নাম দেয়া হয় বন্ধন নার্সারী। জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর-জয়পুর গ্রামে বন্ধন নার্সারীতে বর্তমানে ২শ’ প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। ১০ কাঠা থেকে শুরু বন্ধন নার্সারীর এখন জমির পরিমাণ ৩ বিঘা। এখানে  একেকটি চারার মূল্য ১০ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। 

এ পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করার কথা জানান জহুরুল। এখানে ফলের মধ্যে আমের চারা আছে ৩৪ প্রজাতির উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নাগ ফজলী, হাঁড়ি ভাঙ্গা, মহারাজ, রাজভোগ, ছাতাপুরি ল্যাংরা, লকনা, অনান্য ফলের মধ্যে রয়েছে জামরুল, মিষ্টি তেঁতুল, গোলাপজাম, চালতা, কদবেল, সফেদা, জলপাই ইত্যাদি। লিচুর চারা রয়েছে ৮ প্রজাতির চায়না-৩, মাদ্রাজী, এলাচী, বোম্বাই, শিতলপাটি, কাঁঠালী ইত্যাদি। ২৮ প্রকারের ঔষধি চারার মধ্যে রয়েছে তেজপাতা, দারুচিনি, হরতকি, পান পোক্ত, অপরাজিতা, নীল কন্ঠ, চিরতা, মৃত কুমারি, আমলকি, ওলট কম্বল, পুদিনা, হস্তিকরণ ইত্যাদি। ফুলের চারা রয়েছে ২১ প্রজাতির, উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাসনাহেনা, বকুল, মাধবীলতা, এরিকা পাম্প, গোলাপ, নাইট কুইন জবা, গন্ধরাজ ইত্যাদি। এছাড়াও ১৫ জাতের কাঠের গাছের চারা রয়েছে। 

কৃষি বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্ত একজন নার্সারী মালিক হিসেবে সরকারি কোন সহযোগিতা না পেলেও প্রতি বছর বৃক্ষ মেলায় শ্রেষ্ঠ নার্সারীর মালিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জহুরুল। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান হতে অনেক লোকজন আসে গাছ কিনতে ও পরামর্শ নিতে। নিজের লেখা পড়া কম হলেও একমাত্র ছেলে আরাফাত হোসেনকে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করিয়েছেন। সেই বর্তমানে নার্সারীর দায়িত্বে রয়েছে। জহুরুল ইসলাম বলেন, নার্সারী থেকে প্রতিমাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় থাকে। লেখাপড়া শেষে বেকার যুবকদের ঘুষের টাকা দিয়ে চাকরির নামে সোনার হরিণের পেছনে না দৌঁড়ে আত্মনির্ভরশীল মূলক কাজে যোগ দেয়ার আহবান জানান জহুরুল ইসলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, জহুরুল ইসলাম নার্সারী ব্যবসায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন। খুব ছোট পরিসর থেকে বড় আকারের নার্সারী বাগান করতে পেরেছেন। যা অন্য বেকার যুবকদের আশান্বিত করে তুলছে।

Monday, June 23, 2014

তেল তৈরি করতে না পেরে ঝালকাঠির পাম চাষীরা হতাশ

ঝালকাঠি: ঝালকাঠি জেলায় পাম চাষ সম্প্রসারণ দু’বছর ধরে থমকে গেছে। জেলায় ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ একর জমিতে পামের আবাদ হয়েছে। পামের ফল পেঁকে ঝড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা এই ফল প্রক্রিয়াজাত করে এর তেল বের করতে পারছে না। তেল বের করতে না পারায় পাম ফল এখন ইঁদুরের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।

এ নিয়ে অনেক পাম চাষীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আবার কিছু কিছু চাষী উদ্যম না হারিয়ে পাম থেকে তেল বের করার জন্য নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি বাড়ির বসত ভিটায় ৪টি পাম গাছ থাকলে ৬ সদস্যের একটি পরিবারের বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলেছে অচিরেই কৃষি গবেষণায় পাম ফলের প্রক্রিয়াজাত করণের মেশিন তৈরি করে কৃষক পর্যায় সরবরাহ করলে পাম চাষ যে গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছিল তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। পাম চাষ সম্প্রসারণ হলে দেশে কোলস্ট্রেরলমুক্ত ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে। সরকারের বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে।

ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বাদলকাঠি, ধারাখানা, বেতলোচ, গাবখান, রামচন্দ্রপুরসহ রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়ন জুড়ে জেলার ৪টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পামের চাষ হয়েছে। বিগত ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনা বাহিনীর পরামর্শে পাম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। ওই বছরই জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার এক একর জমিতে পাম চাষের মাধ্যমে রাজাপুর উপজেলায় পামের যাত্রা শুরু করে হয় । প্রক্রিয়াজাত করতে না পাড়ায় তিনি পামের আবাদ বাড়াননি।

সদর উপজেলার বাদলকাঠি গ্রামের ইউনুচ আলী খান এক বিঘা জমিতে পামের চাষ করেছেন, দু’বছর ধরে পাম ফল প্রক্রিয়া জাত করতে না পেরে তার মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, এই ফল দিয়ে কিভাবে তেল বের করা যায় তার সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছে না কৃষি বিভাগ।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেতলোচ গ্রামের মোস্তফা কামাল জানান, তিনি এক একর জমিতে পামের চাষ করেছেন। পাম গাছেও দু’বছর ধরে ফলন আসা শুরু করেছে। তিনি বিভিন্নভাবে ছোট আকারের প্রেসার মেশিন দিয়ে পামের পাকা ফল থেকে তেল বেড় করা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তার পরিবারের রান্নার কাজে এ তেল ব্যবহার করেছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে দক্ষিণ বাংলা কৃষি উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান পাম চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে। এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক গোলাম কিবরিয়া পান্নু জানান, পামের তেল কোলস্টেরলমুক্ত এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় জানান, কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীদের পাম চাষ প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে কৃষক পর্যায় ব্যবহার করার মতো মেশিন তৈরি করে সরবরাহ করা হলে পাম চাষা সম্প্রসারিত হবে।

রাঙ্গামাটিতে রেশম চাষে মহিলাদের অভাবনীয় সাফল্য

রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলায় রেশম চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে উপজেলার মহিলা রেশম চাষীরা। উপজেলার প্রায় ঘরে ঘরে বিশেষ করে মহিলারা রেশম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। কাপ্তাইয়ের আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় মহিলারা এই রেশম চাষে সফলতা পেয়েছেন। দৈনন্দিন পারিবারিক কাজ-কর্ম করার পাশাপাশি মহিলারা বাড়ির আঙ্গীনায় কেউ কেউ বাড়ির ঘরের মধ্যে রেশম চাষ করছেন । আর এতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র। 

স্থানীয় বেতছড়ির বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম জানান, তিনি গত প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম রেশম চাষ শুরু করেন। এতে তিনি সাফল্য পান। পরে তিনি তার মেয়ে ফরিদা পারভিনকেও রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ফরিদা গত ৮ বছর ধরে এলাকায় রেশম চাষ করছেন। ফরিদা তার ছোট বোন শাহানা আক্তারসহ এলাকায় শতাধিক নারীকে রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। বর্তমানে কাউখালীতে চার শতাধিক নারী রেশম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে রেশম চাষী শিরিনা বেগম, রোকসানা বেগম, বৈশাখী চাকমা, হাসিনা বেগম, লায়লা বেগম, গোলাপী বেগম, কুলসুমা বেগম, সুখী চাকমাসহ অনেক নারী জানান। এদের একজন জানান, তিনি তার এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন রেশম চাষ করে। শিরিনা বেগম জানান, তার কাছে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা জমা আছে। যা তিনি রেশম চাষ থেকে আয় করেছেন। এ রকম প্রায় প্রতিটি নারী তাদের সফলতার কথা জানান। 

ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্স অফিসার ও প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাশ আমাদের রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। রেশম গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমাদের বিনামূল্যে রেশম পোকা সরবরাহ করা হয়। রেশম চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিয়মিত পরামর্শ ও দেখভাল করা হয়। যে কোন প্রয়োজনে খবর জানানোর সাথে সাথে আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। আমরা কিভাবে অল্প চাষে এবং স্বল্প পরিসরে অধিক মুনাফা পেতে পারি সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন’। উল্লেখ্য, চাষীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। বেড়ছড়িতে গত ২৪ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ‘বয়স্ক পুল পালন’ বিষয়ক রেশম চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন রেশম চাষ করছেন। কাউখালীতে আদর্শ রেশম পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। 

রেশম চাষীরা বলেন, কাউখালী উপকেন্দ্রে যদি সরকারিভাবে ‘চাকী পলু পালন কেন্দ্র’ গড়ে তোলা যায় তা হলে এলাকায় আরো বেশি সংখ্যক নারী রেশম চাষে এগিয়ে আসবে। পাশাপাশি চাষীরা আরো বেশি লাভবান হবে। 

আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাশ বলেন, কাউখালীতে অনেক মহিলা রেশম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারা এলাকায় চাকী পলু পালন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে। 

বরিশালে লাভজনক পেশা হিসেবে গড়ে উঠছে নার্সারি ব্যবসা

বরিশাল: বরিশাল নগরীতে পথ চলতে গিয়ে অনেক পথচারীর চোখ আটকে যায় রাস্তার পাশে সাজানো সারি সারি ফুল আর ফলের চারার দিকে। 
একজন বৃক্ষ প্রেমিক মাহমুদ বললেন, এসব গাছের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই মুগ্ধতা থেকেই আমি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় গাছ লাগিয়েছি। 
তিনি বলেন, এখন এই নগরীতে ঘরের বারান্দা, ছাদ এবং অফিসেও প্রচুর ফুলের টব শোভা পাচ্ছে। আর রাস্তার ডিভাইডারে বিভিন্ন ফুল ফলের গাছ নগরীর সৌন্দর্যকেও অনেক বাড়িয়েছে। বৃক্ষ প্রেমীদের চাহিদা মেটাতে বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট ছোট নার্সারি। অনেকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন নার্সারি ব্যবসা’কে। 
তাদের মধ্যে একজন রানা পাল। তিনি বরিশাল বিএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে মাত্র পনের হাত জায়গায় নার্সারি গড়ে তুলেছেন। 
তিনি জানান, ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকলে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। নার্সারি ছোট হলেও লাভ ভালোই হয়। 
পর পর তিন বছর বরিশাল বিভাগীয় বৃক্ষ মেলায় ১ম স্থান অধিকারী রানা পাল জানান, তার স্বপ্নের কথাও। তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে বনসাই অ্যাসোসিয়েশন, খামারবাড়ি বা জনসেবামূলক কাজ করার। 
এই নার্সারি ব্যবসায়ী আরো জানান, পরিবেশ ভালো রাখছি দেখে সবাই এ পেশাকে সুদৃষ্টিতে দেখেন। 
নগরীর বিভিন্ন নার্সারিতে ক্যাকটাস, বনসাইসহ শোভাবর্ধক ফুল, ফল ও ঔষুধির বিভিন্ন চারা পাওয়া যায়। চারা লাগানোর জন্য টব এবং পোকামাকড় দমনের জন্য সারও পাওয়া যায় কিছু নার্সারিতে। যাদের নার্সারি একটু বড় তারা সরকারি-বেসরকারি অফিস সাজানোর দায়িত্ব পান।
ক্যাকটাস ভ্যালি পরিচর্যাকারী সুমন ও রুহুল জানান, বিভিন্ন মেলা বা অনুষ্ঠানে তার কাছ থেকে গাছ ভাড়া করে নিয়ে যান আয়োজকরা। মূলত মৌসুম অনুযায়ী গাছ বিক্রি হয়। শীতকালে ফুল আর বর্ষায় ফল বা অন্যান্য গাছের চারা বিক্রি হয় বেশি। তবে গোলাপ, বনসাই এবং ক্যাকটাস সারা বছরই থাকে বিক্রির তালিকায়। নগরীর বিভিন্ন নার্সারিতে দেখা যায়, ১০ টাকা দামের চারা যেমন আছে, তেমনি দুর্লভ কিছু চারা গাছের মূল্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নার্সারিতে চারার সরবরাহ আসে চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ঢাকা ও যশোর থেকে। 
চারা কিনতে আসা গৃহিনী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনার চেয়ে ফুল গাছ থাকা অনেক ভালো। আর এসব নার্সারি থেকে আমরা সহজে ও কম দামে চারা কিনতে পারছি।

Saturday, June 14, 2014

বিদেশ যাচ্ছে বাগমারার পান

রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারায় গড়ে উঠেছে অনেক পানের বরজ। এখানকার পান উত্তরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, বাগমারার পান দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। এখানে পান চাষে আজকের যে সাফল্য তার মূলে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী নামের একজন পান চাষী। বর্তমানে তার গোটা পরিবারই পান চাষের সঙ্গে জড়িত। তাদের দেখাদেখি এলাকায় আরো পানের বরজ গড়ে উঠেছে। আর এর মাধ্যমে তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। 

বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামে পান চাষী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি। এলাকার মানুষজন জানান, মোহাম্মদ আলী একজন সফল পান চাষী। তিনিই এ এলাকায় প্রথম পানের বরজ করেন। বরজ তৈরিতে তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। দিনের প্রায় সবটুকু সময়ই কাটিয়ে দিতেন পানের বরজে। পান চাষী হিসেবে এলাকায় মোহাম্মদ আলীর বেশ সুনাম রয়েছে। 

জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী যখন বরজে কাজ করতেন, তখন তার তিন ছেলে আমিনুল ইসলাম আমিন, আবদুল হামিদ ও আলী হোসেন তাকে সহযোগিতা করতেন। পরে পিতার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে তারাও নিবিড়ভাবে পান চাষে ঝুঁকে পড়েন। তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই আমিন ও হামিদ পান চাষে বেশ সফল হয়েছেন। একটি মাত্র পানের বরজ থেকে তারা আজ ৪/৫টি করে পানের বরজ ও কয়েক বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। আলী হোসেনও পান চাষে বেশ মনোযোগী। শুধু পান বিক্রি করেই তারা স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। পানের টাকা থেকেই মোহাম্মদ আলী ওই এলাকায় প্রথম ইটের তৈরি বাড়ি করেন। 

আমিনুল ইসলাম জানান, পান বিক্রি করে সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো ছাড়াও তারা প্রায় প্রতিবছরই কিছু জমি কিনেন। তিনি জানান, নিজেরা অল্প শিক্ষিত হলেও তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চান তারা। 

আবদুল হামিদ বলেন, তুলনামূলক কম খরচে গড়ে তোলা পান বরজে যথেষ্ট যতœ নিতে হয়। তিনি জানান, প্রথম দিকে শাড়ক, লগর, বাতা, খড়, পাটখড়িসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে আবৃত করে পানের বরজ তৈরির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বেশি পরিমাণে পান পাওয়া যায়। 
বাগমারায় পান চাষে সফল এই দুই ভাই আমিন ও হামিদ তাদের সাফল্যের পেছনের কথা বলতে গিয়ে জানান, মূলত তার বাবার হাত ধরেই তাদের এবং এই এলাকার আরো অনেকের সাফল্য এসেছে। পান বরজের পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক নিজেদের ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে সাফল্যের মূল কারণ। এতে যত বেশি পরিশ্রম করা যাবে ততই ফল পাওয়া যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। 

জানা গেছে, বাগমারার পান এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরবে এই এলাকার পান বেশ জনপ্রিয় বলে জানান আবদুল হামিদ। এছাড়া বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এখানকার পানের বেশ কদর রয়েছে। পূর্বে এলাকার পান চাষীরা আত্রাই, তাহেরপুর, মোহনগঞ্জ, মোল্লাপাড়া, আলোকনগর হাটে পান বিক্রি করলেও এখন তারা আলোকনগরেই পান বিক্রি করেন। স্থানীয় আলোকনগরে পানের বড় হাট বসায় এখানেই দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন পান কিনতে।