জয়পুরহাট: স্ট্রবেরি চাষ করে আর্থিকভাবে সফলতা পাওয়ায় জয়পুরহাটের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছেন এ জেলার প্রথম স্ট্রবেরী চাষ করে জিল্লুর রহমান। এলাকায় এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। মৃত্তিকা সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জয়পুরহাটের মাটি স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী এবং তা সুস্বাদু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্ট্রবেরি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও উচ্চমূল্যের একটি ফল। স্ট্রবেরি জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ফলিক এসিড, সেলোনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেলন, এলাজিক, ফেরালিক, এবং কুমারিক এ্যাসিড। এর মধ্যে এলাজিক এ্যাসিড ক্যান্সার, প্রৌঢ়ত্ব এমনকি এইডস প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করার প্রমাণ রয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ এলাকার খেজুরতলী গ্রামের সফল স্ট্রবেরী চাষি জিল্লুর রহমান এবার ৭ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা, এ জমি থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার স্ট্রবেরী বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। তার বড় ভাই সফল আঙুর চাষি ও রূপসী বাংলা হোটেলের প্রধান প্রকৌশলী রুহুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় ২০০৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ৩ বিঘা জমিতে রাবি-৩ জাতের স্ট্রবেরী চাষ করেন।
এতে আশানুরুপ ফলন না পাওয়ায় পরের বছর বড় ভাইয়ের সাহায্যে আমেরিকা থেকে কামারোসা ও ফেস্টিভাল নামক উন্নত জাতের স্ট্রবেরী চারা সংগ্রহ করেন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের এ স্ট্রবেরী বেশ সুস্বাদু বলে জানান তিনি। তার স্ট্রবেরী বাগানে পরিচর্যার জন্য ৬ জন লোক সার্বক্ষণিক কাজ করেছে। রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও স্ট্রবেরী পুষ্ট ও মিষ্টির কারণে পাখির হাত থেকে রক্ষায় নেট দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। প্রত্যেকটি গাছের গোড়াতে স্ট্রবেরী ঝলমল করতে দেখা যায়। এতে মন জুড়ে যায়।
আগে ৫০ কেজি করে স্ট্রবেরী পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রতিদিন ৪শ’ কেজি থেকে সাড়ে ৪শ’ কেজি পর্যন্ত স্ট্রবেরী তোলা সম্ভব হচ্ছে। প্রথম দিকে প্রতি কেজি স্ট্রবেরী ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে স্ট্রবেরী তেমন বিক্রি হয় না ফলে প্যাকেট জাতের মাধ্যমে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মীনা বাজার, নন্দন সুপার মার্কেট এলাকায় পাঠাতে হয় বলে জিল্লুর রহমান জানান।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক ফসল হওয়ায় স্ট্রবেরী চাষ এ এলাকায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত তিন মাসের ফসল (জানুয়ারি-মার্চ)। জয়পুরহাট জেলার ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ স্ট্রবেরী চাষের উপযোগী বলে জানান, রাজশাহী বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী কামারুজ্জামান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী মন্ডল বলেন, স্ট্রবেরী চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জামালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যানতত্ববিদ ইয়াছিন আলী বলেন, উচ্চমূল্যের ফসল স্ট্রবেরী চাষ করে এ জেলার কৃষকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক সাফল্য পেতে পারে। জিল্লুর রহমান স্ট্রবেরী চাষের পাশাপাশি এখন চারা বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করছেন। প্রতিটি চারার মূল্য ১০ টাকা। স্ট্রবেরী চাষ করে তার আর্থিক সফলতা দেখে অনেকেই স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে এসেছেন।
তার খেজুরতলী এলাকার চার বন্ধু আব্দুল হামিদ, ফারুক হোসেন বাবু, রবিউল ইসলাম ও আব্দুল ওয়াদুদ সরকার সাড়ে ১০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে এবার স্ট্রবেরী চাষ করছেন। যার নাম দিয়েছেন রেড গ্রিন স্ট্রবেরী ভিলেজ। স্ট্রবেরী চাষ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে ফলে কিছুটা ফলন কম পাওয়া যাবে। তবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার স্ট্রবেরী বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আব্দুল হামিদ । এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।
এছাড়াও আব্দুল মোমিন আড়াই বিঘা জমিতে, আতাউল তিন বিঘা, ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহিম তিন বিঘা, কামরুজ্জামান এক বিঘা ও স্বপন ১৮ শতাংশ জমিতে এবার স্ট্রবেরী চাষ করছেন।
এলাকা অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক সুশীল রায় বলেন, স্ট্রবেরী একটি বিদেশী ফল। কিন্তু দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে এর চাষ সারা বাংলাদেশের শুরু হবে। তবে জয়পুরহাটে যে ক’জন স্ট্রবেরী চাষ করছে, তারা প্রত্যেকই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই ধারণা করা যায় স্ট্রবেরি চাষ এখানে আরো বেশি হবে।