বান্দরবান: বান্দরবানের পহাড়ের ঢালুর জমিতে চলতি মৌসুমে চাইনিজ জাতের তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের লেক এলাকায় প্রায় এক একর ঢালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চলতি মৌসুমে চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের বীজ বপন করে তরমুজ উৎপাদন করেছেন সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়ুয়া।
চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের তরমুজ বীজবপন করা হয় গত ৭ নভেম্বর। মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ক্ষেতে ফলন আসে এবং গত ২০ জানুয়ারি তরমুজ ক্ষেতে বাম্পার ফলন লক্ষ্য করা গেছে। চ্যাম্পিয়ন জাতের এ তরমুজ চাষের ক্ষেতে আগাম ফলন ফলে।
তবে মধ্য অক্টোবর মাসে জমিতে এ জাতের বীজ বপন করা হলে পানি-সেচ ছাড়াই ফলন পাওয়া যাবে পাহাড়ি জমিতেও। বান্দরাবান জেলায় এ প্রথমবারে এ জাতের তরমুজ চাষ করে ক্ষেতে বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের লেকবেষ্টিত পাহাড়ি ঢালু জমিতে।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়–য়া জানান, বান্দরবান জেলার মাটি বিভিন্নজাতের ফলদ চাষের অনুকূলে হওয়ায় যে কোন জাতের ফলজ চাষ ও ফলজ উৎপাদন সম্ভব। তাই তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে গত ৭ নভেম্বর পার্বত্য জেলা পরিষদের লেকের তীরে পতিত প্রায় এক একর পাহাড়ি জমিতে চ্যাম্পিয়নজাতের তরমুজের বীজ বপন করেন। এতে দেখা গেছে, বীজপনের মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ফলন এসেছে এবং গত ১৫ জানুয়ারি থেকেই গাছ থেকে তরমজু সংগ্রহ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, জেলার পাহাড়ি মাটির পরিবেশে তরমুজসহ নানাপ্রজাতির ফলজ চাষ উপযোগী। সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী ও প্রান্তিকচাষীদের চ্যাম্পিয়ন জাতের আগাম তরমুজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধকরণ করা যেতে পারে।
পার্বত্য জেলা পরিষদের পাহাড়ের ঢালুতে চাষকৃত তরমুজ খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহের পর দুই সপ্তাহ ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। জেলা পরিষদের এক একর পাহাড়ি মাটিতে এবার উৎপাদিত হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার তরমুজ। এর মধ্যে বড় সাইজের অর্ধেক ও ছোট সাইজের অর্ধেক তরমুজ রয়েছে।
জেলা পরিষদের ফলজ বাগান তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়–য়া আরো জানান, তিনি সহায়তা পেলে আগামীতে এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে আঙ্গুরের চাষ করতে আগ্রহী। স্থানীয় জাতের আঙ্গুর চাষ ও উৎপাদনও ভাল পাওয়া যাবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
অক্টোবরে এ জাতের তরমুজ চাষ করা হলে ক্ষেতে পানি সেচের প্রয়োজন হবে না। তবে নভেম্বর মাসে এ জাতের চাষ করা হলে পানি সেচ বাধ্যতামূলক।
পার্বত্য জেলা পরিষদের ফলজ বাগানে পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত মাঠ কর্মী অংথূইচিং মারমা, বিক্রম ত্রিপুরা, উথোয়াইহ্লা রাখাইন এবং মিন্টু মল্লিক জানান, নতুনভাবে আবিস্কৃত পার্বত্য জেলা পরিষদ লেকের তীরে পাহাড়ের ঢালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে উৎপাদিত চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের সুস্বাদু তরমুজ চাষ বাণিজ্যিকভাবেও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। এতে পাহাড়ের চাষীরা আর্থিকভাবে খুবই লাভবান হতে পারেন বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, জেলার পাহাড়ের ঢালুতে পতিত জমিতে চ্যাম্পিয়ন জাতের তরমুজ চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগ্রহী চাষীরা উপজেলা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তা নিয়ে এ জাতের তরমুজ আবাদ করতে পারেন।